শিরোনাম
রাজধানীতে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার মারাত্মক প্রকোপ চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। যাদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি হতে দেখা গেছে।
গত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে গত এক মাসে দেশে ৩০ হাজারেরও বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পানিবাহিত এ রোগ প্রতিরোধ খুবই সহজসাধ্য হওয়া সত্ত্বেও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যর ঘটনাও ঘটছে। গত এক মাসে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত এক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালে আনার পথে আরও ২৫ জনের মৃত্যু হয়। সবশেষ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ডেমরায় ৩০ বছর বয়সী এক যুবকের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়।
আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ জন করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে (৮-৯ মার্চ) রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। ১০ মার্চের পর দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গড়ে ১ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
চলতি এপ্রিল মাসে রের্কডসংখ্যক দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৪০০ রোগী ভর্তি হয়, অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হয়। গত এক মাসে প্রধানত রাজধানীর পাঁচটি এলাকা- যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, গেন্ডারিয়া, মোহাম্মদপুর এবং টঙ্গী থেকে আসা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ত্রিশোর্ধ্ব থেকে চল্লিশ বছর বয়সী নারী-পুরুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারির মতো এত মারাত্মক না হলেও এসময়ে কেন এত বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, কেনইবা মৃত্যু হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেউ কেউ বলছে, ওয়াসার ময়লা ও দূষিত পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। অতিরিক্ত গরম আর রাস্তাঘাটে খোলা পরিবেশে শরবত ও অন্যান্য খাবার বা বাসি খাবার খাওয়াকে কেউ কেউ কারণ হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার মতো ডায়রিয়ার জীবাণু নিয়ন্ত্রণ কঠিন কিছু নয়। পানি ফুটিয়ে পান, খাবার আগে ও পরে ভাল করে হাত ধোয়া, রাস্তাঘাটে ধুলো-ময়লায় খোলামেলা অবস্থায় বিক্রি করা শরবতসহ বিভিন্ন পানীয় ও খাবার পান না করলেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এছাড়া ডায়রিয়ার প্রকোপ হ্রাসে করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ভোক্তা অধিকারসহ সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান ডা.বাহারুল আলমের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে অনেক রিসোর্স রয়েছে। তারা খুঁজে বের করতে পারেন কী কারণে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তবে গত দুদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। বুধবার (১৩ এপ্রিল) সাম্প্রতিক ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাব বিষয়ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ প্রেস ব্রিফিংয়ের কথা রয়েছে।
আইসিডিডিআরবির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে শহরে বড় বড় হাসপাতাল থাকলেও কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী নেই। ফলে ডায়রিয়া রোগ সম্পর্কে এলাকাভিত্তিক সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে না। প্রতিরোধযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এ কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে।
সূত্র: জাগো নিউজ