শিরোনাম
অর্থ আত্মসাতের মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ জামিন চেয়ে আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর কারণে তাঁর পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। তাঁর মেয়ে ও স্ত্রীকে অনেক অপমান সইতে হচ্ছে।
আদালতকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘স্যার, আমাকে জামিন দেন। আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ১৬ বছরের মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমার মেয়েকে চোরের মেয়ে বলেছে তার সহপাঠীরা। আমার স্ত্রীও বাড়ির বাইরে যেতে পারে না। আমার বউকে সবাই চোরের বউ বলে ডাকে।’’
এ সময় তিনি দাবি করেন, তাকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি নিজে র্যাব সদর দপ্তরে হাজির হয়েছিলেন। এমনকি স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদকে তিনি চিনতেন না।
করোনার নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা খরচ বাবদ ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে আছেন সাহেদ। এ মামলায় আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ হাজির হয়ে তিনি এসব দাবি করেন। পরে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সাহেদের আইনজীবী দবির উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়েই তাঁর মক্কেল কথা বলেছেন। সাহেদ আদালতকে বলেছেন, সাতক্ষীরা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি নিজে র্যাব সদর দপ্তরে হাজির হয়েছিলেন। পরে তাঁকে সাতক্ষীরা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৫ জুলাই র্যাবের বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন সাহেদ। অস্ত্র মামলায় ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সাহেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
আইনজীবী দবির উদ্দিন জানান, অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাহেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ১২ মে অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
করোনার নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার খরচ বাবদ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। এ মামলায় ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদকে অন্তর্ভুক্ত করে ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) মো. শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা মো. দিদারুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, সমঝোতা স্মারক সম্পাদন ও জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনা মূল্যে পরীক্ষা করিয়েছেন।
যেখান থেকে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগীপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার টাকা হিসাবে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য কর্মকর্তার খাবার খরচ বরাদ্দ বিষয়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরেছেন।
রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা চুক্তিকে অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয় দুদকের মামলায়। চুক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে ওই চুক্তি করা হয়েছিল। পরে অধিদপ্তরের এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় মন্ত্রণালয়। জবাবে আরেক চিঠিতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিব আসাদুল ইসলামের ‘নির্দেশে’ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল।
পরে অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব আসাদুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ—দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। একপর্যায়ে আবুল কালাম আজাদ মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দেন।
প্রসঙ্গত, চেক জালিয়াতির একটি মামলায় ২০১০ সালে সাহেদের ছয় মাসের সাজা হয়। তাঁকে ৫৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ। করোনার নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টি আলোচনায় আসার পর চেক জালিয়াতিতে দণ্ডের কথা প্রকাশ্যে আসে।
সূত্র: প্রথম আলো