শিরোনাম
জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২ পাস করেছে সংসদ। প্রস্তাবিত আইনে জেলা পরিষদে বিদ্যমান ১৫ জন সাধারণ সদস্যের পরিবর্তে উপজেলা পরিষদের সমসংখ্যক সদস্য থাকার বিধান করা হয়েছে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) সংসদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।
বিদ্যমান আইনে প্রতি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকার বিধান রয়েছে। এটি সংশোধন করে প্রত্যেক উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমসংখ্যক) একজন করে সদস্য ও চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) ও কমপক্ষে দুজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও পাস হওয়া বিলে নির্বাচন কমিশনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।
জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ সদস্য ও পাঁচ নারী সদস্য অর্থাৎ মোট ২১ সদস্যের পরিষদ রয়েছে। এ আইনে আরও বলা আছে, জেলার অন্তর্গত সিটি কর্পোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জেলা পরিষদের ভোটার।
নতুন বিলে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে পরিষদের সভায় অংশ নিতে পারবে। তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।
বিলে জেলা পরিষদের কার্যক্রমকে সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনতে বিদ্যমান আইনের ৩৭ ধারার পর ৩৭ (ক) যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- পরিষদ প্রতি অর্থবছর শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সম্পাদিত কার্যাবলীর ওপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে।
বিলে বিদ্যমান আইনের কর্মকর্তাদের পদবির পরিবর্তন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘একজন সচিব’ এর পরিবর্তে ‘সিনিয়র সহকারী সচিব’ পদমর্যাদার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবহারের বিধান রাখা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। নতুন বিলে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনের ৮২ নম্বর ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, কোনো জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ও পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসকের মেয়াদ ও অব্যাহতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
মন্ত্রীর প্রস্তাব করা বিলে প্রশাসকের মেয়াদ ছিল না। তবে মন্ত্রী একটি সংশোধনী গ্রহণ করায় এখন প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিনের বেশি হবে না। একইসঙ্গে একাধিকবার কেউ প্রশাসক থাকতে পারবেন না।
বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান আইনে জেলার আয়তন, জনসংখ্যা ও উপজেলার সংখ্যা ইত্যাদি নির্বিশেষে সব জেলা পরিষদে সমসংখ্যক মোট ২১ জন সদস্য রয়েছে।
‘কিন্তু বৃহৎ আয়তনের তুলনায় ক্ষুদ্র আয়তনের জেলা পরিষদগুলোর রাজস্ব আয়ের সংস্থান খুবই কম। ফলে ক্ষুদ্র জেলার পরিষদের পক্ষে সদস্যদের সম্মানী পরিশোধ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয় না। এ সমস্য হতে উত্তরণে প্রত্যেক জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’
‘বিদ্যমান আইনে জেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদের প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত, পূর্বের পরিষদকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে পরবর্তী নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন।‘
তবে পাস হওয়া এই বিলে প্রশাসক নিয়োগের বিধানের বিরোধিতা করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তারা বলছেন, এ বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) পীর ফজলুর রহমান বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিদানের মূল চেতনার সঙ্গে বিরোধী।
জাপার ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিল পাস হওয়ার আগেই বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ যদি আমলে নেওয়া হয় তাহলে এটা বাতিল হয়ে যাবে।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন তোলেন জেলা পরিষদের কাজ কী তা আইনে বলা নেই। এই সংগঠনকে শক্তিশালী করারও দাবি জানান তিনি।
অন্যদিকে, জাপার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া একদিনও রাখা ঠিক হবে না। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কর আরোপ করা যাবে না। তাহলে ভোট না করে কেন প্রশাসক থাকবে?
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশাসকের বিধান রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ আছে। জেলা পরিষদের কাজ কী? এটা দুর্নীতির আখড়া। এই আইনটি ত্রুটিপূর্ণ। যারা সদস্য হবেন তাদের কাজ কী?
হারুন বিলটি প্রত্যাহারের দাবি করে বলেন, সরকার জেলা পরিষদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান করতে চাইলে নতুন করে আইন করতে হবে। গণফোরামের মোকাব্বির খানও বিলটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মত দেন।
এ সব কথার জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার সবসময় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দেয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, এই আইনের মাধ্যমে জেলা পরিষদের সঙ্গে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সংযোগ এবং কাজের সমন্বয় ঘটবে।
তাজুল বলেন, পৌরসভা বিল পাসের সময় বলেছিলাম, সব পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ হয় না। অনেকে মেয়াদ শেষ করার পরে একটা মামলা করেন। ২০ বছর ধরে বসে থাকেন। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য প্রশাসক নিয়োগ। এটা থাকলে কারও মামলা করার ইনটেনশন (ইচ্ছা) হবে না।
সূত্র: জাগো নিউজ