শিরোনাম
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা মমতাজ মীমকে ধাক্কা দেওয়া কাভার্ডভ্যানের চালক সাইফুর রহমান ও তার সহকারী মশিউরকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। এসময় কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করা হয়।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী সাব্বির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সকালে কাভার্ডভ্যানটি মীমকে ধাক্কা দিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে যায়। এরপর তথ্য-প্রযুক্তির সহয়তায় খিলক্ষেত থানা পুলিশ নম্বর প্লেট দেখে গাড়িটি শনাক্ত করে এবং চালক ও তার সহকারীকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে রাতে তাদেরকে ঢাকায় আনা হবে।’
গতকাল শুক্রবার (১ এপ্রিল) সকালে উত্তরার বাসা থেকে বের হয়ে স্কুটি নিয়ে গুলশানের দিকে যাচ্ছিলেন মীম। কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নামার পথে একটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে স্কুটির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের কাছে মীমের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে তার মরদেহ গাজীপুরে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় জানাজা শেষে কালিয়াকৈরের মৌচাকে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে কবর দেওয়া হয়।
মীমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তার (মীম) ছোট বোনের নাম মৌ। গতকাল শুক্রবার সকালে মৌয়ের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ছিল। তাই খুব সকালে মৌকে নিয়ে তার মা পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। দুই বোনের মধ্যে বড় মীম অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় পরিবারে সবার আদরের ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই মীমের পছন্দের সাবজেক্ট ছিল ইংরেজি, স্বপ্ন ছিল নামিদামি কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। সেই অনুযায়ী মীমের বাবার প্রতিষ্ঠিত মৌচাক আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-ফাইভ পেয়ে ভর্তি হয়েছিলেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন বছর ধরে মীম স্কুটি চালিয়ে বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন।
মরদেহ নিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা মীমের মামাতো ভাই অ্যাডভোকেট মো. নাবিল আলী কামরুল বলেন, মীমের বাবা মৌচাক আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আর মা গৃহিণী। দুই মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরা-৬ নম্বর সেক্টরে থাকতেন তারা। বাসে যানজট ও ভিড় থাকায় যাতায়াতের সুবিধার্থ উত্তরা-৬ নম্বর সেক্টর থেকে নিজেই স্কুটি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন মীম। তিন বছর ধরে মীম স্কুটি চালিয়ে আসছিল। এর আগে সে কখনো অ্যাক্সিডেন্ট করেনি। আজ সকালেও স্কুটি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিল মীম। শুনেছি, একটি কাভার্ডভ্যান কিংবা ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে করে মীমের মাথায় আঘাত লাগে। হেলমেট থাকলেও ভেঙে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। বেপরোয়া গতির কারণে কাভার্ডভ্যানের চালক মীমের স্কুটি চাপা দেয়। এ ঘটনায় কাভার্ডভ্যানচালকের বিরুদ্ধে মামলা করবো- যোগ করেন কামরুল।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজল সরকার বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একজন পথচারী মীমকে রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই।
সূত্র: জাগো নিউজ