আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যায় ব্যবহার হয়েছে একাধিক অস্ত্র, সিদ্ধান্ত কমলাপুরে

ফানাম নিউজ
  ০১ এপ্রিল ২০২২, ১১:২৪

রাজধানীর শাহজাহানপুরের ব্যস্ত সড়কে ফিল্মি স্টাইলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় একাধিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। হত্যার মাসখানেক আগে কমলাপুরের রূপালী ক্লাবে (রূপালী যুব উন্নয়ন সংস্থা) চার-ছয়জনের এক বৈঠকে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বৈঠক হয়।

বোঁচা বাবু হত্যাকাণ্ড ও ওই মামলার আসামিদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ফেঁসে যাওয়ার ভয় টিপু খুনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি মতিঝিল এলাকার ক্রীড়া পরিষদ, হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ, ইজারাসহ অবৈধ অর্থনৈতিক আয় এ হত্যার অন্যতম কারণ।

এতে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া শুটার মাসুমসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মালিকের বিষয়েও মিলছে তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে অস্ত্রসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ডিবি সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কমলাপুর থেকে একটি রিভলবারসহ দামাল নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিউটি অফিসার এসআই ফরিদ আহমেদ।

রিভলবারটি পাকিস্তানে তৈরি। কিন্তু এ অস্ত্রটিই টিপু হত্যায় ব্যবহার হয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা। তবে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি যে সূত্র থেকে এসেছে, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটিও একই জায়গা থেকে এসেছে-এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্তকারীরা আরও বলেছেন, এ ঘটনায় মূল শুটারের বাইরে সেখানে আরও কেউ ছিল। তাদের ধারণা, ঘটনাস্থলে একটি ‘ব্যাকআপ পার্টি’ রাখা হয়েছিল। সেখানেও ছিল ভাড়াটে শুটার।

যদি কোনো কারণে শুটার মাসুমের গুলি মিস হয়ে যায়, তাহলে অন্যরা যাতে কিলিং মিশন সম্পন্ন করতে পারে। তবে একজনের বিষয়ে অন্যরা সেভাবে জানতেন না। সবার মধ্যে সমন্বয় করেছেন মুসা। রাজধানীর গোপীবাগের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তীতে তা চূড়ান্ত হয় কমলাপুরে।

এদিকে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, টিপু হত্যার সন্দেহভাজন নির্দেশদাতা মুসার অবস্থানের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন বলে আশা তাদের। মুসার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন একজনকে গোয়েন্দাজালে আনার খুব কাছাকাছি রয়েছেন তারা।

পাশাপাশি শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশের (৩৪) ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোড়ান এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী বাবুও রয়েছেন গোয়েন্দা নজরদারিতে। এছাড়া ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের ক্যাশিয়ার ফারুক খানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীম বলেন, তদন্তে অগ্রগতি রয়েছে। একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২১ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় টিপুকে খুনের মিশনে অংশ নেয় পেশাদার কিলার বাহিনী। এক থেকে দেড় মিনিটের অপারেশন শেষে পালিয়ে যায় কিলাররা।

১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে টিপুর দিকে। এর মধ্যে তার শরীরে সাত রাউন্ড গুলি লাগে। ঘটনাস্থলের আশপাশে কিলার বাহিনীর আরও কয়েক সদস্যের অবস্থান ছিল। প্রয়োজনে গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে প্রস্তুত ছিল তারা।

সুচারু পরিকল্পনায় খুব কাছ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গুলিতে নিহত হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি। এ ঘটনায় ২৭ মার্চ শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। বর্তমানে তিনি সাত দিনের রিমান্ডে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।

সূত্র: যুগান্তর