শিরোনাম
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও সতর্কতার সঙ্গে দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের ব্যাপারে সুপরিকল্পিতভাবে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার উপজেলা পর্যায়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে (এসএইচএনআইবিপিএস) সিক্সথ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন প্লাস্টিক সার্জারি-২০২২ এবং 'মুজিব কর্নার' ও 'বঙ্গবন্ধু গ্যালারি' উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা উপজেলা পর্যায়ে দগ্ধদের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।'
তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জন অব বাংলাদেশ (এসপিএসবি) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে এবং ওই কমপ্লেক্সগুলোতে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় এই বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তার সরকার প্রতিটি বিভাগে পৃথক ও স্বনির্ভর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
ফরিদপুর জেলায় একটি ১০০ শয্যার প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিট স্থাপনের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বড় জেলায় এ ধরনের ইউনিট প্রয়োজন।
২০১৩-২০১৪ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের পেট্রোল বোমা হামলায় নিরীহ মানুষের মৃত্যুর জন্য তিনি তাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, 'তারা কখনোই জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করেনি।'
তার সরকার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে (ডিএমসিএইচ) ৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট স্থাপন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ওই সময়ে ওই সব অগ্নিদগ্ধ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনো আধুনিক চিকিৎসা সেবা ছিল না। পরে ডিএমসিএইচে আরও একটি বার্ন ইউনিট স্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশে প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একটি ৫ শয্যাবিশিষ্ট ইউনিট স্থাপন করেন।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধু থানা পর্যায়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা দিতে তার সরকার ২০১৮ সালে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা সম্বলিত ৫০০ শয্যার শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণ করেন।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা ছিল না। সেজন্য আমরা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণ করে মানুষের জন্য আধুনিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করি।'
তিনি আরও বলেন, দেশে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতাল চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনা এবং দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি সৃষ্টিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না। তাই, তার সরকার বিশেষত আধুনিক বিজ্ঞানের ওপর গবেষণা পরিচালনায় সব সময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি শক্ত ভিত গড়ে তুলতে তার সরকার দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে এবং পরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে আরও ৩টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশে অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে তার সরকার দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে, যাতে করে দেশের মানুষ প্রাথমিক অবস্থায় ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পেতে পারে।
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ও এসপিএসবি'র সাবেক সভাপতি ডা. সামন্ত লাল সেন এবং এসপিএসবি মহাসচিব ডা. হেদায়েত আলি খান।
এসপিএসবি সভাপতি ও এসএইচএনআইবিপিএস এর পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাহ্য পদার্থের নিরাপদ ব্যবহার ও সংরক্ষণ এবং গৃহস্থালি কাজে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অগ্নিদগ্ধকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদানে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের দাহ্য পদার্থের নিরাপদ ব্যবহার ও সংরক্ষণ সম্পর্কে এবং পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদানে সচেতনতা সৃষ্টিতে দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে যাতে কেউ মারাত্মক আহত হওয়ার আগেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এ ক্ষেত্রে স্কুল পর্যায়ের ছোট শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত সকল পর্যায়ের মানুষকে শিক্ষা দেওয়া উচিৎ।
প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের এবং ব্যবহারের পর সিলিন্ডারের সুইস অফ রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি ভবনের নকসা তৈরির সময় রান্নাঘরের খোলা জানালা রাখার জন্য আর্কিটেক্ট ও প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে রান্না ঘরে সহজেই বাতাস প্রবেশ ও বের হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী যে সকল প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কলকারখানায় দাহ্য পদার্থ ব্যবহার হয়, সেখানে সচেতনতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে এবং সচেতন হতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন। তিনি হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসা সুবিধার সবটুকু ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদানে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জনদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, এই বার্ন ইনস্টিটিউটে যুক্ত মাথার যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচারের উল্লেখ করে বলেন, এই হাসপাতাল থেকে জনগণ যে কোনো দুর্ঘটনায় অন্যান্য শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা নিতে পারবে।
সূত্র: বাসস।