শিরোনাম
রাজধানীর সানজিদা আক্তার যখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন তার রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। রক্ত দেওয়ার আগে পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজিটিভ। একটি ক্লিনিকে ‘ও’ পজিটিভ রক্ত দেওয়া শুরু করতেই সানজিদার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। এভাবে তিনবার রক্ত দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর বেসরকারি আরেকটি হাসপাতালে। ‘ও’ পজিটিভ রক্তদাতাদের সঙ্গে সানজিদার রক্তের ক্রস ম্যাচিং করে জানা যায়, কারও রক্তের সঙ্গেই তাঁর রক্তের গ্রুপটি মিলছে না। এরপর সানজিদার রক্তের নমুনা পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর রক্তের গ্রুপ ‘বোম্বে’।
‘বোম্বে’ বিরলতম রক্তের একটি গ্রুপ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে ‘বোম্বে’ গ্রুপের রক্ত শনাক্ত করা হয়। বিভাগটির দেওয়া তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত দেশে সানজিদার মতো ‘বোম্বে’ গ্রুপের রক্ত আছে ৪০ জনের শরীরে। রোগীকে রক্ত দেওয়ার সময় জটিলতা দেখা দিলে তখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ট্রান্সফিউশন বিভাগে রক্তের নমুনা পাঠানো হয়। তাই এই রক্তের দাতা কতজন, তা জানার কোনো উপায় নেই। রোগী হিসেবে যারা এই বিভাগে যান, তাঁদের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে।
চিকিৎসক ও রক্ত নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁরা বলছেন, ভারতে প্রতি ১০ হাজারে একজনের মধ্যে ‘বোম্বে’ গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে ‘বোম্বে’ গ্রুপের রক্ত আছে, এমন মানুষের সংখ্যা মাত্র ২৮ হাজার। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যানই নেই।
১৯৫২ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে ‘বোম্বে’ গ্রুপের রক্ত নিয়ে ভারতীয় তিন চিকিৎসক উয়াই এম ভেন্ডে, সি কে দেশপান্ডে ও এইচ এম ভাটিয়া একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে আহত একজন রেলশ্রমিকের শরীরে প্রথম এই রক্তের গ্রুপটি শনাক্ত হয়। মুম্বাইতে (মুম্বাইয়ের আগের নাম বোম্বে) শনাক্ত হওয়ায় চিকিৎসক ভেন্ডে এই গ্রুপের রক্তের নাম দেন ‘বোম্বে’। এই গ্রুপের রক্তকে ইংরেজি ছোট হাতের অক্ষর এইচএইচ অথবা বড় হাতের ও এবং ছোট হাতের এইচ অক্ষরের (Oh গ্রুপ) গ্রুপের রক্তও বলা হয়।
‘বোম্বে’ গ্রুপের রক্ত নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আয়েশা খাতুন। তিনি বলেন, সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের শতকরা ৩৩ দশমিক ৯৭ ভাগ মানুষের রক্ত ‘ও’ গ্রুপের। ‘ও’ গ্রুপেরই ভিন্ন একটি রূপ ‘বোম্বে’ গ্রুপ। এখন রক্তের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। রক্তের সঠিক গ্রুপ নির্ণয়ের সুযোগ বাড়ায় ‘বোম্বে’ রক্তের গ্রুপ নিয়ে কথা হচ্ছে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের সঠিক গ্রুপিং হলে ‘বোম্বে’ ব্লাড গ্রুপের সংখ্যা আরও বাড়বে।
অধ্যাপক আয়েশা খাতুন আরও বলেন, কারও রক্তের গ্রুপ ‘বোম্বে’ হলে সবার আগে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে ‘বোম্বে’ গ্রুপের সন্ধান করতে হবে। মা ও বাবা হিটারোজাইগাস Oh জিনের ধারক-বাহক হলে তাঁদের ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের রক্তও বোম্বে গ্রুপের হতে পারে।
সূত্র: প্রথম আলো