শিরোনাম
রমজানের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণ নিত্যপণ্য আমদানি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এরপরও রমজান আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাতে অস্থিতিশীল করে তুলেন ভোগ্যপণ্যের বাজার। আর এতে করে বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ ক্রেতাদের।
আবার অনেক সময় আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য কিনে ফেলেন ভোক্তারা, যা বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি করে। এই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। প্রতিবছরের ন্যায়ে এবারও আশ্বস্ত করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এবার তেল, ছোলা, চিনি ও ডালসহ রমজান-কেন্দ্রিক নিত্যপণ্য গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি আমদানি হয়েছে। তাই দাম বৃদ্ধি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ওই দুই দেশ থেকে আসা পণ্যের দাম রমজানের পরে বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছোলা আমদানি হয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার ৯২১ টন। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৯৩৩ টন। একই সময়ে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৯২ টন। আগের বছর আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৮১৬ টন। গত বছর মটর আমদানি হয়েছিল দুই লাখ ৯০ হাজার ৮৯৭ টন।এবার আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭১১ টন।
অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এখন পর্যন্ত চার দশমিক পাঁচ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং ছয় দশমিক তিন লাখ টন পাম তেল আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চার লাখ ৮৮ হাজার ২২১ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আরও ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি-বাহী দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় এসে পৌঁছেছে।
খাতুনগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রতি শুল্ক প্রত্যাহারের পর খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে মণপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ হাজার ১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের প্রথম দিকে ছিল পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা।
২০ দিনের ব্যবধানে ছোলার দামও কমেছে কেজি-প্রতি দুই থেকে তিন টাকা। এখন ছোলা মান ভেদে ৬০ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। মণপ্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি-প্রতি বেড়েছে এক টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে মটর বিক্রি হতো ৪০ টাকায় প্রতি কেজি। বর্তমানে মটরের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা খুবই সামান্য।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, সব পণ্যের দামই নিম্নগামী। এখনো সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি, আশা করছি বাড়বে। রমজানের চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুত রয়েছে। বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকলে কোনো পণ্যের দামই বাড়বে না। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ওই দুই দেশ থেকে আসা পণ্যের দাম রমজানের পর কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীদের এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না ভোক্তারা। মো. সোহাগ মিয়া নামে এক ভোক্তা বলেন,ব্যবসায়ীরা এখন দাম না বাড়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই সরকারের কার্যকর মনিটরিং চাইছেন তিনি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পাইকারিতে কিছু পণ্যের দাম কমলেও খুচরা বাজারে দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। সরকারের উচিত খুচরা বাজারে তদারকি অব্যাহত রাখা। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। কেউ যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুনাফা করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য সারা দেশেই এখন আমদানি করা হয়। তাই সারা দেশেই সরকারের উচিত পণ্যের দাম মনিটরিং করা। তাহলে অযথা পণ্যের দাম বাড়বে না বলে মনে করে তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, যে পরিমাণ পণ্য মজুত রয়েছে, তাতে রমজানে দাম বৃদ্ধি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদিও দাম বৃদ্ধি হয় গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে হবে বলে মনে করছেন তিনি।
সূত্র: আরটিভি