শিরোনাম
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার চারদিন পরও ঘোষণা হয়নি ভোটের ফলাফল। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও তার সমর্থকদের হট্টগোল ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের পর স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে শুক্রবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। ফলে ভোটের এ ফল কবে নাগাদ ঘোষণা করা হবে, তা নিয়েই এখন দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধান মশিউজ্জামান শনিবার রাতে বলেন, আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল, তাই বলেছি যে শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকেলে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে তার (আবদুন নূর দুলালের) আবেদন নিষ্পত্তি করবো। পুনরায় ভোট গণনা করা হবে এমন কথা আমি বলিনি। আমি জান বাঁচানোর জন্য পদত্যাগ করেছি। কারণ আমাকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনা আমাকে বড় দুঃখ দিয়েছে। আমি অপমানিত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি তো পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দিয়েছি শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায়। পদত্যাগপত্রে আমি স্বাস্থ্যগত কারণ উল্লেখ করলেও আসলে আমি অপমাণিত হয়েছি। গত তিন বছর ধরেই আমি বারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু এমন নোংরামি কখনো দেখিনি। বারের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আমি একটা ফর্মে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম সেটা হচ্ছে না।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এ সংগঠনের ২০২২-২৩ কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের দুদিনব্যাপী ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (১৫ ও ১৬ মার্চ)। ভোট গণনা শেষে ওই রাতেই আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু গণনার এক পর্যায়ে ভোটে ‘কারচুপি ও বাতিল ভোট গণনা’র অভিযোগ তুলে সম্পাদক পদে ভোট পুনর্গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের কাছে আবেদন করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল। এ পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি দুইজন, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সম্পাদক দুইজন, ট্রেজারার এবং সদস্য পদে সাত জনসহ মোট ১৪টি পদে পাঁচ হাজার ৯৯১ জন ভোটার ভোট দেন।
দুলালের করা অভিযোগ ও ভোট পুনর্গণনা দাবির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে মশিউজ্জামান তাৎক্ষণিকভাবে জানান, শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকেল ৩টায় আবদুন নূর দুলালের আবেদন দুজন সম্পাদক প্রার্থীর উপস্থিতিতে (রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ) নিষ্পত্তি করবেন। এরপর আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, শুক্রবার বিকেলে শুধু সম্পাদক পদের ভোট গণনা শেষে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। ওই রাতেই পদত্যাগ করেন মশিউজ্জামান।
তবে মশিউজ্জামানের দাবি, পদত্যাগ করায় অভিযোগ নিষ্পত্তি নিয়ে তার দেওয়া বক্তব্যের আর কোনো কার্যকারিতা নেই।
আইনজীবীরা বলছেন, সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে এক প্রার্থীর আবেদন এবং পরে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগে ভোটের ফলাফল কবে জানা যাবে, তা নিয়ে এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অতীতে দুই পক্ষের সম্মতিতে পুনরায় ভোট গণনার নজির থাকলেও নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ সমিতির ইতিহাসে আগে ঘটেনি, এমনটাই বলছেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
আইনজীবীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস (বর্তমান সম্পাদক) এগিয়ে ছিলেন।
নিজের পদত্যাগ বিষয়ে মশিউজ্জামান শনিবার রাতে বলেন, সমিতির গঠনতন্ত্রে পুনরায় ভোট গণনার বিধান নেই। তবে স্বাস্থ্যগত কারণে শুক্রবার (১৮ মার্চ) রাত ১টায় সমিতির বিদায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছি। এখন কার্যনির্বাহী কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থীর পক্ষে তার কর্মীরা যে আচরণ করেছেন তা অনাকাঙ্ক্ষিত। দলের বড় নেতারা উপস্থিত থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে তারা যে আচরণ করেছে, সেটা মেনে নেওয়ার মতো না। এটা দেখে নেতারা কোনো প্রতিবাদও করলেন না। আগে জানতাম নেতারা কর্মী চালান। আর ওই রাতে দেখলাম কর্মীরা নেতাদের চালান।
এদিকে আব্দুন নূর দুলালের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ভোট পুনর্গণনার পক্ষে মত দিয়েছেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী নির্বাচনে অর্ধশতাধিক ভোটে এগিয়ে থাকা নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে গণতান্ত্রিক চর্চা রয়েছে। দেশের আর কোথাও না থাকলেও এই একটি জায়গায় এখনও গণতন্ত্রের চর্চা হয়। এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সূত্র: জাগো নিউজ