শিরোনাম
পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস এমনকি লং আইল্যান্ড ছেড়ে আরও ভেতরের শহরতলির দিকে ঝুঁকছেন মার্কিনরা। বাংলাদেশের মানুষও আগামী বছর দশেকের মধ্যে ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হবে। এই ভাবনা থেকে এখনই গ্রামে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপত্তা দিতে বিট পুলিশিং সেবা চালু হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ নির্মিত প্রথম গ্রাফিক নভেল ‘দুর্জয়ের ডায়েরি’ এবং অ্যানিমেটেড ফিল্ম সিরিজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেন।
অ্যানিমেটেড চরিত্র পুলিশ উপপরিদর্শক ইফতেখার আহমেদ দুর্জয় ‘দুর্জয়ের ডায়েরি’র মূল চরিত্র। তিনি একজন বিট পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর সহকর্মী সহকারী উপপরিদর্শক নাজনীন নাহার শাপলা। দুর্জয়ের কাছে প্রতিদিন দূরবর্তী এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে আসেন। তিনি উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো লিখে রাখেন তাঁর ডায়েরিতে। এরপর সহকর্মীদের নিয়ে মানুষের সমস্যার সমাধান করেন।
বিট পুলিশিংকে উপজীব্য করে বাংলাদেশ পুলিশের মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড পাবলিসিটি উইং এই গ্রাফিক নভেলটি তৈরি করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিরিজের একটি পর্ব দেখানো হয়।
২০১০ সালে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রথম বিট পুলিশিং চালু হয়। এই ব্যবস্থার মূলমন্ত্র হলো মানুষকে আর সেবা পেতে দূরদূরান্তে ছুটতে হবে না, বরং পুলিশই আসবে মানুষের দোরগোড়ায়। পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, এই উদ্দেশ্য থেকে সরকারের অনুমতি নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারী উপপরিদর্শক ও দুজন কনস্টেবলের একটি দলকে বসার জন্য কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছে। বছরখানেক আগে দেশকে ৬ হাজার ৯১২টি বিটে ভাগ করে বিট পুলিশিং চালু করা হয়। বিট পুলিশিংয়ের কারণে ২০ থেকে ২৫ হাজার মামলা কমে যায়।
নিরাপত্তার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, ‘সমাজ, সম্প্রদায়, রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা দরকার। সে কারণে আমরা এক বছরের ওপর বিট পুলিশিং নিয়ে কাজ করছি। পুলিশি সেবাকে গ্রামের মানুষের কাছে নিয়ে গেছি। রাত হোক বিরাত হোক, সময় হোক অসময় হোক—আমাকে দৌড়ে যেতে হতো। এখন আমরা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আশির দশকে এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় নিউইয়র্ক শহরে কী ঘটেছিল সেটা সবাই জানেন।’
পুলিশ মহাপরিদর্শক জনগণের শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড়লোক যাঁরা, তাঁরা নিউইয়র্ক শহরে থাকেন না। যাঁরা থেকেছেন ওই শহরে বা বারবার যান, ভ্রমণ করেন তাঁরা জানেন, দু–তিন দিন নিউইয়র্ক থেকে শহর চেনা যায় না। শহরকে বুঝতে হলে দেশকে, সমাজ–সংস্কৃতিকে, তার মধ্যে অবস্থান করতে হয়। একটা শহরে গিয়ে তার অবকাঠামোর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেই হয় না। স্ট্যাচু অব লিবার্টির সামনে ছবি বা সায়েন্স মিউজিয়ামের সামনে ছবি, নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্কের সামনে ছবি তুললেই নিউইয়র্ক দেখা হলো না। যাঁরা জানেন...নিউইয়র্ক পৃথিবীর বড় শহরগুলোর মধ্যে পড়ে, অনেকেই ব্রঙ্কসে থাকেন না। তাঁরা সবাই শহরতলিতে থাকেন।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, যে আকর্ষণে মানুষ শহরে ছুটে আসেন, সেই সুযোগ–সুবিধাগুলো গ্রামে যাবে। বাংলাদেশে অবকাঠামোগুলো তৈরি হয়ে গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ অনেকেই ঢাকার কাছে শহরতলিতে বা গ্রামে চলে যাবেন। সেখানে মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে বিট পুলিশিং। কারণ, নিরাপত্তা হলো অক্সিজেনের মতো।
সূত্র: প্রথম আলো