শিরোনাম
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে এক বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা জানান ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বেশ কিছু প্রকল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
এ বিনিয়োগের পরিমাণ হতে পারে ৫ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার। বৈঠক শেষে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও অর্থায়ন করে। আমরা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে টাকা নিই। সে টাকা কাজে লাগিয়ে দেশে যে আয় হয়, সে অনুযায়ী জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণ বা লোন পরিশোধ করি।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা এ পর্যন্ত কখনো ঋণখেলাপি হইনি। এ কারণে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের ব্যপারে বেশি আগ্রহী। বিশ্বব্যাংকও আমাদের টাকা দিতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পে যেসব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন, ব্রিজ-কালভার্ট প্রয়োজন, সেগুলো বাস্তবায়নে অর্থায়ন করতে সম্মত বিশ্বব্যাংক। সাইক্লোনপ্রবণ কোস্টাল এলাকার দুর্গত মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেগুলোতে অর্থায়নেও রাজি সংস্থাটি।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের বেশ কিছু প্রকল্প চলমান। নতুন আরও কিছু প্রকল্প নিতে হবে। বিশ্বব্যাংক আমাদের এখানে ৫ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে রাজি। এটা উন্নয়নমূলক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি ছিলো ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়ন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামে শহরের সব নাগরিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গিকার রয়েছে সরকারের।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মডেল গ্রামে যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্য-প্রযুক্তি ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নত পয়োঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানো, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোসহ সব সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, একসময় পদ্মা সেতুতে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল বিশ্বব্যাংক। এর প্রেক্ষিতে আমরা নিজস্ব সামর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। তাদের ১.২ বিলিয়ন ডলার ছিলো, আমরা সেখানে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে ব্রিজসহ কানেক্টিং রাস্তাও করেছি। পাশাপাশি আউটার জেলাগুলোকেও কানেক্টিভিটির আওতায় আনা হয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে বিশ্বব্যাংকসহ সবার কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নতি ছাড়াও ব্রিজ ও রাস্তাসমূহের আরও টেকসই নির্মাণের জন্য নতুন বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ণ করতে আগ্রহী। গ্রামের সব জায়গায় স্যানিটেশন ও পানি পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে আমি বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদলকে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ একটি সমন্বিত দর্শন। বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য মার্কেট তৈরি করার মতো অনেক প্রকল্প আমাদের দরকার। এর মাধ্যমে শহরের সুযোগ-সুবিধাগুলো গ্রামে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
তবে সরকার কোন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেবে, তা এখনো ঠিক হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে বেশ কিছু প্রকল্পে বিভিন্ন ব্যাংকের আগের কমিটমেন্ট আছে, তারা টাকাও দিচ্ছে। এছাড়া আমরা আরও কয়েকটি প্রকল্প নিতে চাই। এসব প্রকল্পে ব্যাংকগুলো চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন করতে চায়।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রকল্প অনুযায়ী অর্থায়নের চাহিদা দিলে তা দিতে রাজি বিশ্বব্যাংক। আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এডিবি, বিশ্বব্যাংক নাকি জাইকা থেকে ঋণ নেবো, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ