বাংলাদেশে প্রস্তুত হচ্ছে চীনের মিসাইল রক্ষণাবেক্ষণাগার, উদ্বেগে ভারত

ফানাম নিউজ
  ১৩ মার্চ ২০২২, ২০:৩৪

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়ে পুরো বিশ্বই সরগরম। এরইমধ্যে চাঞ্চল্যকর এক খবর দিলো জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া। 

টোকিওর প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া-এর ওই খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে বিমান বিধ্বংসী মিসাইল (সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল) রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রস্তুত করছে চীন। কিন্তু দেশের কোথায়, কবে থেকে চীনের মিসাইল মেনটেইনেন্স ফ্যাসিলিটি সেট আপের উদ্যোগ- সে সম্পর্কে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

ঢাকা বা বেইজিং কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে মিসাইল রক্ষণাবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠার কথা স্বীকার না করলেও ‘নিক্কেই এশিয়ার কন্ট্রিবিউটিং রাইটার নীতা লালের লেখা ওই প্রতিবেদনে এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে।

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বাংলাদেশি কূটনীতিকের বরাতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নের বিষয়টি বেইজিং এবং ঢাকা উভয়ে আড়ালে রাখতে চায়, কারণ চীন এখানে কি করছে তা পশ্চিমারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বাংলাদেশকে প্রদেয় সুবিধায় চীনা কোম্পানি ভ্যানগার্ড অংশীদার, এটি চীনের মিলিটারি রিলেটেড বিনিয়োগ এবং সরবরাহের অংশ। যার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধজাহাজ, নৌ-বন্দুক, জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, যদিও বাংলাদেশ নিজেকে ভারতের ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ বলে মনে করে, তবুও তারা চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

তিনি আরও বলেন, ২০০২ সালে দুইপক্ষ একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই করে, যার মধ্যে অস্ত্র উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি উভয়ের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণের জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি ইন্সটিটিউটেও যাচ্ছেন।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লী অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্বেগের বড় জায়গা হচ্ছে- বাংলাদেশের মতো ভারতের পুরনো মিত্রদের সঙ্গে খাতির তথা প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করে চীন ওই সব দেশের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলছে। চীনের এই তৎপরতাকে ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবেই দেখছে ভারত।

নীতা লাল লেখেন- ২০১১ সালে বাংলাদেশকে যে সারফেস টু এয়ার মিসাইল দিয়েছে, তা রক্ষণাবেক্ষণে চীন এমন ব্যবস্থা তৈরি করছে যাকে ‘হাব’ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আর এতেই নয়াদিল্লীতে বিপদ ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। ‘রক্ষণাবেক্ষণ হাব’ প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যেকার চুক্তি নিয়ে বেইজিং বা ঢাকা কেউই এখনো মুখ খোলেননি। অর্থাৎ এ বিষয়ে অদ্যাবধি আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে ঢাকার এক সিনিয়র কূটনীতিক নিক্কেই এশিয়াকে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। 

উল্লেখ্য, বিশেষভাবে ডিজাইন করা এবং ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সারফেস টু এয়ার মিসাইল (স্যাম) যা গ্রাউন্ড টু এয়ার মিসাইল জিটিএএম বা সারফেস টু এয়ার গাইডেড উইপন (স্যাগউ) নামে পরিচিত। এই মিসাইলকে আধুনিক যুগের বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়।

এদিকে এসব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকাস্থ বেইজিং-এর রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, বিদেশের মাটিতে সামরিক ঘাটি করে না চীন। যদি কোন দেশ চায় তবেই সামরিক সরঞ্জাম ব্যবস্খাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে থাকে। তবে বাংলাদেশে মিসাইল কারখানা তৈরির খবর খতিয়ে দেখবেন তিনি।

সূত্র: চ্যানেল২৪