শিরোনাম
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ফায়দা নিতে না পারেন সেজন্য দু-একদিনের মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রোববার (১৩ মার্চ) সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও বাজার পর্যালোচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বর্তমানে দেশের বাজারে অতিরিক্ত দামে যে তেল বিক্রি হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার আগেই আমদানি হয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একটি প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, যেটা জানুয়ারি মাসের ৩০ দিনের গড় আমদানি মূল্যের ওপর করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে আজ যেটা বাড়ছে সেটা আজ প্রভাবে ফেলছে, তা কিন্তু নয়।
তিনি বলেন, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা কিন্তু কথাবার্তা বলেই দাম নির্ধারণ করেছি। সেটার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, আমরা কোথাও মজুতদারি করতে দেবো না। কোনো সুযোগ নিতে দেবো না।
এ প্রসঙ্গে টিপু মুনশি আরও বলেন, এজন্য আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে এ (অবৈধ মজুত) প্রচেষ্টা করা হবে, সেখানেই আমরা হস্তক্ষেপ করবো। এমন না যে আজ দাম বাড়ার কারণে তারা দাম বাড়িয়েছেন, আসলে তারা আগের হিসাব ধরে বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা সেটা বন্ধ করবো।
তিনি বলেন, আমরা ক্রাইসিস মোকাবিলার জন্য টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে ছয়টি পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি। এর কমপক্ষে চারটি পণ্য গ্রামাঞ্চলেও পাঠাবো। সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে ১৫ লাখ মানুষকে কীভাবে এ সেবা দেওয়া যায় এবং সেটার যেন অপব্যবহার না হয়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক মানুষ টিসিবির পণ্য পাচ্ছে না- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস বুঝতে হবে, যেখানে দেড়শ ট্রাক ছিল সেখানে সাড়ে ৪০০ ট্রাক নিয়ে নেমেছি। প্রতিদিন বা রাতারাতি তো বাড়ানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি আগামী রোজা সামনে রেখে এক কোটি মানুষকে টিসিবির পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। মেশিন চাপলেই যে চলে আসবে, তা তো নয়। আমরা ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছি। আলোচনা হয়েছে, প্রয়োজনে আমরা আরও ব্যবস্থা নেবো। পুরো বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, যা করণীয় করবো।
এদিন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে বিকেল ৪টার দিকে সরকারের চার মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রী জরুরি বৈঠকে বসেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিব, পুলিশ পরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, এ (দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি) সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধুতা যেন প্রশ্রয় না পায়। এজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে। আমরা দু-একদিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করবো। যেন কেউ সুযোগ না নিতে পারে।
তিনি বলেন, সরকার কিন্তু অত্যন্ত পিজিটিভলি কনসিডার করছে যে, পণ্যের মূল্য কোনটা হওয়া উচিত। গ্রাহকদের কাছ থেকে এর চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের চেষ্টা যারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা অ্যাকশনে যাবো, এটা বলতে পারি।
সম্প্রতি দেশে ভোজ্যতেল, ডাল, চাল, আটা, চিনি, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। অন্যদিকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। বাজার সংশ্লিষ্টসহ সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, রোজা সামনে রেখে বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তবে এর আগেই নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে চায় সরকার।
সূত্র: জাগো নিউজ