শিরোনাম
ভোজ্যতেল-চিনিসহ আমদানিনির্ভর বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ছাড় দিয়ে সোমবার (১৪ মার্চ) প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। রোববার (১৩ মার্চ) সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও বাজার পর্যালোচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সাপ্লাই সোর্স, স্টক সোর্স এবং যে কোনো উপায়ে দাম যেন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি না হয়, সেটার দিকে নজর রাখবো। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ভ্যাট-ট্যাক্সের বিষয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো যায় কি না সেটা নিয়েও শিগগির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো বা তুলে দেওয়া, ডিউটি কিংবা ট্যাক্স যেটাই হোক। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর অর্থাৎ ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর কতখানি কমানো যায় আমরা একটা ঘোষণা দেবো।
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কীভাবে মানুষকে সাশ্রয়ী দামে পণ্য দেওয়া যায়, যার জন্য সরকার যেটা করতে পারে...ভ্যাট-ট্যাক্সের ব্যাপারে, একটা পজিটিভ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি, আগামীকালের মধ্যে একটা পদক্ষেপ নিতে পারবো।
এসময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আশা করছি (শুল্ক প্রত্যাহার) আগামীকাল এসআরও হয়ে যাবে।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে বিকেল ৪টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়।
বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, পুলিশ পরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে আরও যেসব সিদ্ধান্ত
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার মাত্রা নেই। প্রতিদিনই লক্ষ্য করছি দাম বাড়ছে। সেটার প্রভাব কিন্তু আমাদের দেশেও আসছে। রোজার মধ্যে অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়তে পারে, সেটা মাথায় রেখেই আমরা আজ বসেছিলাম।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কিছু কিছু জায়গায় কমে যাচ্ছে। সারাবিশ্বেই কমছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ছে কিংবা পড়বে। ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে আসায় গম সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা অসুবিধায় পড়তে পারি। দাম বাড়তে পারে। আমরা এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো, সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারবো সেজন্য সভা হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে আমরা ওএমএস (খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি) কার্যক্রম বাড়াবো। যাতে ন্যায্যমূল্যে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। দ্রব্যের যে সাপ্লাই চেইন সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবো। নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে ঠিক থাকে। পণ্যের মজুতের বিষয়টি সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে বলেও জানান মন্ত্রী।
ভোজ্যতেলের বিষয়ে বৈঠক দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এক বছর আগে প্রতি টন সয়াবিনের দাম ছিল এক হাজার ২৩৫ ডলার, পাম তেল প্রতি টন ছিল এক হাজার ৩২ ডলার। ৯ মার্চ প্রতি টন সয়াবিনের দাম ছিল এক হাজার ৯৩০ ডলার, পাম তেলের দাম হয়েছে এক হাজার ৮৯৭ ডলার। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির চাপে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। চাহিদার ১০ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয় না। আমাদের পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কাজেই পরিস্থিতি কী হতে পারে তা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করছেন। তেলের দাম সহনীয় রাখার জন্য, দাম যেভাবে বাড়ছে। দেশবাসীকে সহনীয় পর্যায়ে দিতে আজকের এই মিটিং।
মন্ত্রী বলেন, রোজার অতিরিক্ত চাহিদা বিবেচনা করে ত্বরিত আমদানির ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা মোটামুটি সবাইকে উৎসাহ প্রদান করবো যাতে করে এসব জিনিস আমদানি করে মার্কেট স্থিতিশীল রাখে।
রোজায় বিদ্যুতের সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা বুঝতে পারছেন যে ডিজেলের সরবরাহ হয়তো কমে যেতে পারে। আমাদের গ্যাসের সরবরাহ কমে যেতে পারে। সেগুলো সঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে বিদ্যুতের ঘাটতি না হয়। কোনোকিছুতেই যাতে আমাদের জনগণ অসুবিধায় না পড়ে সেজন্য যা যা করার সেটা করছি।
সূত্র: জাগো নিউজ