শিরোনাম
হেমন্তের কোমল হিমেল হাওয়া যেমন শীতের আবেশ জাগাচ্ছে, তেমনি বাজারে থরে-থরে সাজানো শীতের সবজিও রসনাবিলাসীদের রসনাতৃপ্ত করার জন্য প্রস্তুত।
সবজি খেতে আমরা কম বেশি সবাই খুব পছন্দ করি। আর শীতকালীন সবজির তো কথায় নাই। কেননা সবজির জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো শীতকাল।
আর আমাদের দেশে শীতকালে প্রায় সব সবজি পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি জানেন কী এই শাকসবজিগুলো থেকে আমরা কী কী উপাদান পাই কিংবা এর উপকারিতা কী?
আপনি জানেন কী কিছু কিছু সবজিতে এমন উপাদান আছে; যা কিনা আপনার ক্যান্সার প্রতিরোধক? আবার কিছু সবজি আপনার উচ্চরক্ত চাপ কমিয়ে জটিল রোগ থেকে আপনাকে মুক্ত রাখে? যদি আপনি না জানেন কিংবা আপনি জানতে আগ্রহী হন তাহলে জেনে নিন কিছু জনপ্রিয় শীতকালীন সবজির উপকারিতা…।
শীতে যত ভিন্ন রকম সবজি পাওয়া যায়, সারা বছরজুড়ে তার কিয়দাংশ পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে শীতকালীন শাক-সবজির বীজ ঢাকাসহ প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন বীজ ভাণ্ডার থেকে সংগ্রহ করা যায়। আপনি চাইলে এই সবজির বীজ খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারেন এবং সবজির চাষ করতে পারেন। আমাদের দেশে শীতের সবজি বলতে এক সময় জনপ্রিয় ছিল ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, ব্রোকলি, গাঁজর, লাউ, টমেটো, শিম, আলু, ওলকপিসহ নানান প্রকার সবজি।
আর এখন এসব সবজি বারো মাসকাল বাজারে পাওয়া যায়। তবুও শীতেকালে চাষকৃত এই সবজিগুলার কদর কিন্তু এখনও রয়ে গেছে। শুধু সহজলভ্যতায় নয় এ সকল সবজির পুষ্টি গুণও অধিক। শীতের প্রতিটি সবজিতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়া প্রায় সব শাক সবজিতে থাকে প্রচুর পানি যা দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। এই এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমাদের ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। শাক-সবজির আঁশ ও এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালীর ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য এসব শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। আসুন জেনে নেই শীতের সবজির গুণাগুণ সম্পর্কে—
গাজর:
সবজির মধ্যে গাজর অন্যতম প্রধান। গাজর কাঁচা ও বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। গাজর আমাদের দেশে অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু শীতকালীন একটা সবজি, যা আপনি এখন প্রায় সারা বছরই বাজারে পাবেন। তরকারি বা সালাদ হিসেবে গাজর খাওয়া যায়।
প্রাপ্ত উপাদান:
গাজরে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, বি ও সি এবং পর্যাপ্ত খাদ্য শক্তি রয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত অধিকাংশ শাক সবজি ও ফলমূলের চেয়ে গাজরে ভিটামিন ‘এ’র মাত্রা অধিক। শিশুদের রাত কানা রোগ প্রতিরোধ ও শরীরে শক্তি জোগাতে গাজর খাওয়া উচিত। ৪-৬ বছর বয়সের একটি শিশুর দৈনিক ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’ খাওয়া প্রয়োজন। অপরদিকে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’ খাওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দু’একটি গাজর খেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘এ’র অভাব সহজেই পূরণ হতে পারে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে রয়েছে জলীয় অংশ ৮৫.০ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, আঁশ ১.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৫৭ কিলোক্যালরি, আমিষ১.২ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা, ১২.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.২ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১০৫২০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৪ এবং ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম।
উপকার:
গাজরে আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদানগুলো অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। গাজরে প্রয়োজনীয় ক্যারোটিনয়েড যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আপনি যদি গাজরের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করেন তাহলে ত্বকের মরা কোষ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ধনেপাতা:
এখন বারো মাস পাওয়া গেলেও এটা আসলে শীতকালীন সবজি। গাড়-সবুজ রঙ্গের এই সবজি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। নানান পদের তরকারি, চাটনি ও আচার তৈরি করে খাওয়া হয়।
প্রাপ্ত উপাদান:
ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফলিক অ্যাসিড।
উপকার:
ধনেপাতায় যে ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ লবণ ও অন্যান্য উপাদান পাওয়া যায় তা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ধনেপাতার ভিটামিনগুলো আমাদের ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে থাকে এবং আমাদের মুখের ভেতরের নরম অংশ গুলোকে রক্ষা করে। মুখ গহ্বরের দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনে পাতার ভিটামিন এ আমাদের চোখের পুষ্টি জোগায়। রাতকানা রোগ দূর করতে ধনেপাতা বিশেষ ভূমিকা রাখে।
কোলেস্টেরলমুক্ত এই ধনেপাতা আমাদের দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ধনেপাতায় প্রয়োজনীয় আয়রন আমাদের শরীরের রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে থাকে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও ধনেপাতার অবদান অনেক বেশি।
এছাড়াও ধনেপাতা তে আছে প্রচুর পরিমাণে-কে। ভিটামিন-কে তে ভরপুর ধনেপাতা হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে আমাদের শরীরকে শক্ত-সামর্থ্য করে। তবে মজার কথা হল যে, ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। “অ্যালঝেইমারস” নামে এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ রয়েছে, যা নিরাময়ে ধনেপাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শীতকালীন আমাদের ঠোঁট ফাটা, ঠাণ্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে ধনেপাতা যথেষ্ট অবদান রাখে।