বিয়ের আংটি

ফানাম নিউজ
  ০১ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪৬

বিয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলঙ্কারটির নাম আংটি। বর বা কনে উভয়েরই আঙুলের শোভা বাড়ায় আংটি। আবার এনগেজমেন্টের সময় কিন্তু কনের অনামিকায় আংটি পরিয়ে বিয়ের বিষয়টি পাকাপোক্ত করা হয়।

তাই আংটি একটি বিয়ের স্মৃতি হয়ে থাকে সারাজীবনের জন্য। স্বর্ণ, রূপা কিংবা ইমিটেশন যে কোনো ধাতুর তৈরি আংটি একজন মানুষকে সবার কাছে রুচিশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করে। তাই বর বা কনের কাছে আংটি শুধু বিয়ের অনুষঙ্গ নয়, বরং ব্যক্তিত্ব প্রকাশেরও একটি মাধ্যম।

আংটি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই রুচিশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সেটি হাতের সঙ্গে মানানসই হবে কিনা তা ভেবেই আংটি পছন্দ করা উচিত। আবার আংটি শুধু একটি আঙুলেই নয়, সব আঙুলেই ব্যবহার করে এর বৈচিত্র্য আনা যায়। কিন্তু বিয়ের বা এনগেজমেন্টের আংটি সবসময় অনামিকায় পরানো হয়। বাঁ হাতের এই আঙুলে বাগদানের আংটি পরানো হয়। তবে দেশভেদে হাতের দিকে পরিবর্তন আছে। বাঁ হাতের পরিবর্তে ডান হাতে আংটি পরানো হয়ে থাকে। বিয়ের আংটি অবশ্য বাঁ হাতেই পরানো হয়; কারণ এটি একেবারে হৃদয়ের।

অন্যদিকে প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা বিশ্বাস করতেন, বাঁ হাতের অনামিকা সরাসরি হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। যার কারণে তারা এর নাম দিয়েছিলেন ‘ভেনাআমোরিস’ বা ‘ভালোবাসার ধমনি’।

এই বিশ্বাসে অনামিকায় আংটি পরানো হতো। দুটি প্রেমপূর্ণ হৃদয়ের মিলন ঘটত গোলাকার আংটির রূপ ধরে। আংটির আকার গোলাকার হওয়ারও বিশেষ কারণ আছে। বৃত্তের কোনো প্রান্ত নেই, অসীম এর যাত্রা। ভালোবাসারও যাতে কোনো প্রান্ত না থাকে, তারই রূপক উপস্থাপন ছিল এর আকারে।

আবার চীনা উপকথায় অনামিকা নিয়ে আরেক ধরনের তত্ত্ব আছে। চীনারা বিশ্বাস করেন— হাতের পাঁচ আঙুল আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রকাশ করে। এই তত্ত্বের ছোট একটি পরীক্ষাও আছে। আমাদের বুড়ো আঙুল প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের বাবা-মাকে। তর্জনী আমাদের সন্তানদের।

মধ্যমা আমাদের নিজেকে। অনামিকায় আছে আমাদের জীবনসঙ্গী। কনিষ্ঠায় আমাদের নাতি-নাতনিরা। এবার দুই হাতে সব আঙুলের মাথা পরস্পর স্পর্শ করুন। মধ্যমা আমাদের নিজের চিহ্ন, তাই একে ভাঁজ করে ভেতরের দিকে রাখুন যাতে মধ্যমার গাঁট দুটো লেগে থাকে। এবার এক এক করে ওপরে থাকা আঙুলগুলো আলাদা করার চেষ্টা করুন। বুড়ো আঙুল আলাদা করা যায়, অর্থাৎ আমরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাব। তর্জনী আলাদা করা যায়, মানে আমাদের সন্তানরাও সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকে না। কনিষ্ঠাও তা-ই, নাতি-নাতনিরাও সারাজীবন পাশে থাকে না। সব আঙুল আলাদা করা গেলেও মধ্যমা দুটো ভেতরের দিকে ভাঁজ করে রাখা অবস্থায় কেবল অনামিকা আলাদা করা যায় না। অর্থাৎ সঙ্গীর সঙ্গে থাকতে হবে সারাজীবন। এ জন্যই অনামিকায় আংটি পরানো হয়।

এসব তত্ত্ব যা বলুক না কেন, আংটি অবশ্যই আঙুলের মাপ এবং আঙুলের ধরনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কেনা উচিত।

আঙুলের ধরন ও মাপ

হাতের আঙুলের আকার যদি লম্বাটে হয়, তা হলে পার্ল কিংবা ওভাল আকারের রিংগুলো সবসময় ভালো নাও লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাউন্ড চাংকিরিং ভালো মানাবে।

অন্যদিকে ওভাল শেপের রিং বেশি মানায় ছোট আঙুলে। এ ছাড়া জিওম্যাট্রিক শেপের রিংগুলো ছোট আঙুলের জন্যও মানানসই। এতে আঙুলের আকার বড় দেখাবে।

অনেকের আঙুল আবার সরু হয়ে থাকে। তাদের জন্য রাউন্ড শেপের স্টোন রিং হাতের সৌন্দর্যকে আকর্ষণীয় করে তোলে। মোটা ও পুরু আংটি ও সরু আঙুলকে কিছুটা মোটা দেখাতে সাহায্য করবে। বড় সাইজের স্টোন দিয়ে তৈরি চাংকিরিং একটু মোটা আঙুলের জন্য ভালো। কেননা এতে আঙুল সরু দেখাবে।

এতো গেল আঙুলের শেপ অনুযায়ী আংটির কথা। যাদের শুধু আঙুল নয়, পুরো হাতটিও বড় ধরনের, তাদের ছোট স্টোন অথবা ছোট ধরনের যে কোনো আংটি ব্যবহার করা উচিত নয়, সেখানে পরা উচিত বড় সাইজের স্টোনের চাংকিরিং বা আংটি। ছোট আকারের হাতের জন্য সবসময় ওভারসাইজড রিং এড়িয়ে চলা দরকার।

কোথায় পাবেন ও দাম

গাউসিয়া, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন শপিংমলের গহনার দোকানে ঢুঁ মারলে নিশ্চিত পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের বিয়ের আংটি। আড়ং, যাত্রা, অঞ্জন’স, বিবিয়ানা, মায়াসির, মাদুলী ও বাংলার মেলায় পাবেন দেশি উপাদানে তৈরি বৈচিত্র্যময় নকশার আংটি।

আড়ংয়ে রূপা ও সোনার প্রলেপ দেওয়া আংটি পাবেন ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। পুঁতি ও বিভিন্ন ধাতুর তৈরি ফ্যাশনেবল আংটি পাবেন ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

অঞ্জন’স-এ পাবেন কুন্দন, মুক্তা ও পাথর বসানো নানা রঙের রূপা ও গোল্ড প্লেটেড আংটি ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৩৫৭ টাকায়। ডায়মন্ড কাটের বিদেশি আংটিগুলো পাবেন ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। চাইলে ফরমায়েশ দিয়েও বানানোর সুযোগ রয়েছে।

লাইফ স্টাইল এর পাঠক প্রিয়