শিরোনাম
শাকসবজি শরীরের জন্য উপকারী, এ বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু বেশি করে শাকসবজি খেলে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়, এমনটিও পুরোপুরি সত্য নয়। যুক্তরাজ্যের গবেষকদের একটি গবেষণার ফলাফলে এমনটিই দাবি করা হয়েছে। খবর বিবিসির
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি এবং চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এ গবেষণা করেন। গবেষকেরা অন্তত চার লাখ মানুষের খাদ্যাভ্যাসের তথ্য সংগ্রহ করেন, যাঁরা সবাই ইউকে বায়োব্যাংক শীর্ষক গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও তাঁরা দৈনিক কী পরিমাণ রান্না করা ও কাঁচা সবজি খান, সেসব তথ্যও নেওয়া হয়।
গবেষকেরা বলছেন, শাকসবজি ছাড়া মানুষ কী খায় বা দিনের কতটা সময় ধরে ব্যয়াম করে, এ বিষয়গুলো ছাড়াও মানুষ কোন পরিবেশে কোথায় বসবাস করছে, এগুলো স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আরও বেশি ভূমিকা রাখে।
গবেষকেরা সুষম খাবারের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সুষম খাবার ক্যানসারের মতো অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়।
গবেষকেরা বলছেন, গবেষণায় হৃদ্রোগ ও রক্তসংবহন সমস্যা কতবার ঘটেছে, তার ওপর ‘শাকসবজি গ্রহণের প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব’-এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ড. বেন লেসি বলেন, ‘খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে হৃদ্রোগের সম্পৃক্ততা বোঝার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।’
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) ও স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শকেরা দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ প্রকারের ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া গড়পড়তা লোকেরাই জানিয়েছেন, তাঁরা দিনে দুই টেবিল চামচ কাঁচা সবজি ও তিন টেবিল চামচ পরিমাণ রান্না করা সবজি খান। এরপর পরবর্তী ১২ বছর তাঁদের স্বাস্থ্যের ওপর পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা হয় যে হৃদ্যন্ত্রের কোনো সমস্যার কারণে তাঁদের হাসপাতালে যেতে হয়েছে বা মৃত্যু হয়েছে কি না।
গবেষকদের ভাষ্যমতে আশার কথা হচ্ছে, যাঁরা কম শাকসবজি খান, তাঁদের তুলনায় যাঁরা পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি খান, তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কম। তবে এর সঙ্গে মানুষের জীবনাচারের বিষয়গুলোও জড়িত। অর্থাৎ তাঁরা ধূমপান করেন কি না কিংবা কী পরিমাণ অ্যালকোহল তাঁরা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া ব্যক্তির চাকরি ও আয়ও এর সঙ্গে জড়িত।
কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর মেটাবলিক মেডিসিনের অধ্যাপক নাভিদ সাত্তার বলেন, শাকসবজির মতো আঁশযুক্ত খাবার ‘ওজন কমাতে এবং হৃদ্রোগের কারণ হিসেবে পরিচিত বিষয়গুলোর ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে’। এ বিষয়ে ‘ভালো পরীক্ষামূলক প্রমাণ’ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ গবেষণার ফলাফল নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে দিনে কমপক্ষে পাঁচটি ফল ও শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শটি পাল্টানো উচিত নয়।
দুঃখজনকভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী অনেকেরই এটির অভাব রয়েছে। আরও ভালো সবজি খাওয়ার বিষয়ে উত্সাহিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এদিকে পুষ্টিবিষয়ক সাময়িকী ফ্রন্টায়ারস ইন নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, যাঁরা প্রচুর পরিমাণে কাঁচা শাকসবজি খান, তাঁদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমতে পারে। কারণ, শাকসবজি রান্না করলে ভিটামিন সির মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
রান্নায় ব্যবহৃত তেল ও চর্বি শরীরে সোডিয়াম ও চর্বির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকির কারণ হিসেবে পরিচিত। প্রচুর শাকসবজি খাওয়া লোকেরা কম ক্যালরি ও কম চর্বি খান। পাশাপাশি অধিক ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গ্রহণ করতে পারে, যা শরীরের কোষের ক্ষতি রোধ করতে সক্ষম।