শিরোনাম
কক্সবাজারে ধর্ষণকাণ্ডের মূলহোতা আশিকুল ইসলাম আশিকসহ কয়েকজন ছিলেন ওই নারীর পূর্ব পরিচিত। ওই নারী কক্সবাজারে বারবার আসেন এবং দীর্ঘদিন অবস্থান করেন। কক্সবাজারে বহুল আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডের পর এসব কথা এখন সর্বত্র চাউর হয়েছে। পুলিশও একই কথা বলছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও এসব কথার সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। পুলিশের অনুমান ধর্ষণের অভিযোগটি ‘সাজানো’। সূত্র: আরটিভি
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমদ জানান, তিন মাস ধরে ওই নারী (ধর্ষণের শিকার) বেশির ভাগ সময় কক্সবাজার যাতায়াত করেছেন। এ রকম তথ্য আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে একবার ভিকটিমের স্বামী কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অভিযোগ করেছিলেন যে তার মোবাইল ফোন টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। পুলিশ এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করেছে। গত দেড় থেকে দুই মাস আগে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ভিকটিম বলেছিলেন, কোনো ব্যক্তি তাকে আক্রমণ করতে পারে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করেও ঘটনার কোনো সত্যতা পাননি। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা না গিয়ে আরও ১৫ দিন কক্সবাজারে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে ধর্ষণের মতো এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ওঠার পর আমরা সার্বিক বিষয় নিয়ে তদন্ত করছি। ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ৯৯৯-এ ভিকটিম ফোন দিয়েছিলেন বলে যেই দাবিটা করেছেন তার সত্যতাও পাওয়া যায়নি।
upay
এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিএনজি করে তাকে (ভিকটিম) তুলে নেওয়ার সময় চিৎকার চেঁচামেচি করলে পাবলিক প্লেসে যে কেউ দেখতে পেত। এ ধরনের প্রত্যক্ষদর্শী কেউ আছেন কি না, তিনি উল্টো জানতে চান।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, একাধিক জায়গায় আশিকের স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন ভিকটিম। সর্বশেষ ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামের হোটেল রেজিস্ট্রারেও আশিকের স্ত্রী হিসেবে তার নাম ‘সাথি’ লেখা হয়েছে। এ ছাড়া কোথাও সানজিদা, কোথাও অন্য নামে তিনি পরিচয় দিয়েছেন। আবার প্রশাসনের লোকজনকে বলেছেন মায়াবি বেগম। ঠিকানাও একেকবার একেক জায়গায় বলছেন। মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিষেধ করেন। তিনি দিচ্ছেন এক তথ্য, আবার তার স্বামী দিচ্ছেন আরেক তথ্য।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান অভিযুক্ত আশিক শহরের ম্যাজিস্ট্রেট কলোনি হয়ে ইদগাহ মাঠ পেরিয়ে স্টেডিয়ামের গেইট থেকে সিএনজি করে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মোটেল জোন কলাতলীর দিকে চলে যায়। কিন্তু সে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। স্থানীয় অনেকের অভিমত ঘটনা যাইহোক, আশিকের সাথে মেয়েটির কখন থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়েছে বা হচ্ছে তার কললিস্ট বের করলে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হতে পারে।
উল্লেখ্য, কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে দফায় দফায় ধর্ষণের শিকার উই নারী পর্যটককে বুধবার রাত দেড়টার দিকে শহরের হোটেল মোটেল জোনের ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামের আবাসিক হোটেলের ২০১নং কক্ষ থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজারের র্যাব-১৫-এর একটি দল।
ভিকটিমের ভাষ্যমতে, বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। সেখান থেকে বিকেলে যান সৈকতের লাবণী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন। ধর্ষণ শেষে তাকে নেওয়া হয় ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুমের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা। এই হোটেল থেকেই ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে র্যাব।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, খবর পেয়ে আমরা অভিযানে গেছি। তার স্বামী-সন্তানকেও উদ্ধার করি। অভিযুক্ত হোটেল ম্যানেজারকে আটক করেছি।