শিরোনাম
প্রাচীন কাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের নদীপথ জনপ্রিয়। প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে নদীপথে চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় মানুষ যাতায়াত করে। সূত্র: বাংলানিউজ
যেমন মানুষের যাতায়াত রয়েছে তেমনি পণ্যবাহী নৌযানগুলোও নারায়ণগঞ্জে আসা যাওয়া করে।
তবে নদীপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের উপদ্রব বেড়েছে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা। ভয়ংকর সব ডাকাতরা ধরা খেলেও দীর্ঘদিন জেলে থেকে জামিনে এসে আবারও ডাকাতি, চাঁদাবাজি শুরু করে। অবিলম্বে এসব ডাকাতদের গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে শহরের ৫নং খেয়াঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কিছু সংখ্যক বালুবাহী বাল্কহেড নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন যুবক উঠে প্রতিটি বাল্কহেড থেকে তেল সংগ্রহ করছেন। কেউ তেল দিচ্ছেন আবার কেউ টাকা। যারা টাকার পরিবর্তে তেল দিচ্ছেন তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতেও শোনা যায়।
ওইসব যুবকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, পিকনিক করবে সেজন্য বাল্কহেড ও জাহাজ থেকে সামান্য তেল নিয়েছে। তখনও তাদের হাতে ১০ লিটার তেলের বোতল ভরা ছিল। ঠিক তখন সাংবাদিক শুনেই দ্রুত সকলে চলে যান তারা। কেউ তাদের পরিচয় দিতে রাজি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নৌ যান শ্রমিক বলেন, চাঁদা নিতে এসেছে ওই যুবকরা। ৫০০ টাকা করে দিতে হবে। না হলে তেল নিয়ে যাবে ৪ থেকে ৫ লিটার করে।
তারা বলেন, আমরা চাঁদপুর থেকে বালু নিয়ে নারায়ণগঞ্জে আসি। কখনো মুন্সিগঞ্জ আবার কখনো ডেমরাও যাই। এ পথে ৯ থেকে ১০টি পয়েন্টে চাঁদা নেয় পুলিশ ও চাঁদাবাজরা। এ পয়েন্টগুলো হলো- মহনপুর, এখলাসপুর, দশ আনি, চাঁদপুর মোহনা, কাঁচপুর ব্রিজের নিচে, ডেমরা খালে, আদমজী, কয়লাঘাট ইত্যাদি এলাকায়। আজকেই আমরা ২৭০০ টাকা চাঁদা দিয়েছি। যখন মাল নিয়ে আসি তখনই এমন টাকা দিতে হয়। এটা শুধু আমাদের না সবার।
তিনি বলেন, চাঁদা নেয় সেটা এক কথা, কিন্তু এখন নতুন করে বেড়েছে ডাকাতি। মাঝে এটা কম ছিল। এখন প্রায় দিনই বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি হচ্ছে। ৭ থেকে ৮জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কখনো আমাদের বাল্কহেডে আবার কখনো জাহাজে ডাকাতি করে। কিছুদিন আগেই আল আকসা নামে বাল্কহেডে ডাকাতি হয়েছে। কয়েক লাখ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। শুধু যে টাকা ও জিনিস নিয়েছে তা নয়, যাওয়ার আগে মারধর করেছে সবাইকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। কেউ ভয়ে থানায় অভিযোগ দেয়নি। এ ডাকাতির ভয়ে এখন রাতে বাল্কহেড চলে না। যদিও প্রয়োজনে চলাচল করে তখনও তিন থেকে ৪টি একত্রে চলে।
শ্রমিকেরা বলেন, ডাকাতি হয়, চাঁদাবাজি হয়, সব কিছুই পুলিশ জানে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয় না। পত্রিকায় আমরা তথ্য দিলে আমাদের নাম গেলে উল্টো আমাদের মারধর ও হামলা করে, মামলাও করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বলেন, চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকার শাহাব উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে কবীর চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জের কালিরচর এলাকার আমিন উদ্দিন বেপারীর ছেলে বাদশা বেপারী, একই জেলার রাম কালিরচর এলাকার শাহজাহান সরকার ও চাঁদপুর মতলব এলাকার জমির উদ্দিন ফকিরের ছেলে আলামিনসহ কয়েকজন ভয়ংকর চিহ্নিত ডাকাত জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তারা বের হয়ে আবারও ডাকাতি শুরু করেছে। যার জন্যই এখন ডাকাতি বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, এসব ডাকাতদের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের সখিপুর থানা, মুন্সিগঞ্জ থানা, নারায়ণগঞ্জ, ডেমরাসহ বিভিন্ন জেলার থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা আছে। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হলে আবারও ডাকাতি কমে যাবে। প্রশাসনের কাছে দাবি এদের গ্রেফতার করা হোক।
নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার বলেন, সম্প্রতি চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বেড়ে গেছে। প্রায়ই নৌযান শ্রমিকেরা এ বিষয়ে আমাদের জানাচ্ছে। এ চাঁদাবাজি বন্ধ ও ডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আন্দোলনের ফলে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যায়। এর ফলে কিছুদিন ডাকাতি বন্ধ থাকলে আবার কিছুদিন পর তা শুরু হয়ে যায়। এ বিষয়ে আমরা ফের আন্দোলন করবো। নৌ এসপি, ডিসি সবাইকে স্মারকলিপি দেবো।
নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, কিছু দিন আগে স্প্রিড বোট নিয়ে মুখে মাফলার পেঁচিয়ে যাওয়া কয়েকজনকে ধাওয়া দেয় পুলিশ। পরে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। সন্দেহ হয় যে ওরাও ডাকাতির জন্যই এসেছিল। তবে আমরা এ বিষয়ে সর্তক আছি। নৌ পুলিশের টহল অব্যাহত আছে। ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ বেড়ে থাকলে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।