আনুশকার মৃত্যুর আলামতে ‘ধর্ষণ’ ও ‘ফরেন বডির’ প্রমাণ

ফানাম নিউজ
  ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৫:২৪

রাজধানীর কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিনের মৃত্যুর রহস্য খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্তে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জানা গেছে, তদন্তকারী সংস্থা এ মৃত্যুর পেছনে ‘ধর্ষণ’ ও ‘ফরেন বডি)-র আলামত খুঁজে পেয়েছে। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) আহসান হাবিব পলাশ।

পিবিআই’র ভাষ্য অনুযায়ী- মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিনকে ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছিলো। এছাড়া তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে ‘ফরেন বডি’ ব্যবহারের আলামত পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া ‘ধর্ষণ ও হত্যা মামলার’ তদন্ত কার্যক্রমের ডিএনএ রিপোর্টে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শিগগির এ মামলায় চার্জশিট দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আনুশকা নূর আমিন ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলে পড়াশোনা করতো। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ওইদিন দুপুরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন। যার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

এরপরই কলাবাগান থানা পুলিশ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল গিয়ে ইফতেখার ফারদিন দিহান নামে এক তরুণকে হাতেনাতে আটক করে। খবর পেয়ে তার ৩ বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরও আটক করে। মূলত দিহান ছিল আনুশকার খুব কাছের বন্ধু যা প্রেমের সম্পর্কে গিয়ে গড়ায়। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সে কারাগারে আছে।

ঘটনার দিন হাসপাতালে নেয়ার আগে আনুশকার মাকে দিহান ফোন করে জানায়, আনুশকা আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। সেই সংবাদের ভিত্তিতে আনুশকার মা এবং বাবা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন।

পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) আহসান হাবিব পলাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ হবে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হতে পারে। মামলার কিছু কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে কার বিরুদ্ধে কতটুকু অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে- সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে বলা যাবে।’

আনুশকা নূর আমিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে ডিএনএ রিপোর্ট নিয়ে কাজ করার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ছিলেন ডা. সোহেল মাহমুদ। বর্তমানে যিনি (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।

আনুশকার বাবা মো. আল আমিনের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ ছিল, ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টায় আনুশকা কোচিংয়ের পেপার আনতে বাইরে যাচ্ছে বলে ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আনুশকা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আনুশকার মাকে ফোন দিয়ে জানায় মেয়ে অচেতন হয়ে হাসপাতালে রয়েছে।

এজহারে দিহানের ফোন কলের কথা উল্লেখ করে আনুশকার বাবা অভিযোগ করেছিলেন, আনুশকা তার (দিহানের) বাসায় গিয়েছিল। সেখানে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এ কথা শুনে আনুশকার মা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

আনুশকার বাবা এজাহারে আরও উল্লেখ করেছিলেন, দিহান তার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে দুপুর ১২টার দিকে বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে ফাঁকা বাসায় আনুশকাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে আনুশকা অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করে।

এরপরই ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।