জাতিসংঘে কথা বলার সাধ মিটল না তালেবানের

ফানাম নিউজ
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৫৪

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ছিল তালেবানের। উদ্দেশ্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া।

কিন্তু তাদের সেই সাধ আর মিটল না। আফগানিস্তানের অংশগ্রহণ ছাড়াই সোমবার শেষ হয়ে গেছে এবারের সম্মেলন। আফগানিস্তান ছাড়াও এবার জাতিসংঘে ভাষণ দেয়নি মিয়ানমারও।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বলেছে, তালেবান ও আইএস-কে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ করেছে কি-না, তা খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি। সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান সংস্থার নতুন প্রধান করিম খান। খবর এএফপির।

গত মাসের মাঝামাঝিতে (১৫ আগস্ট) কাবুল পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। চলতি মাসের শুরুর দিকে সরকারও গঠন করেছে গোষ্ঠীটি। এরই মধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৭৬তম অধিবেশন শুরু হয়।

তাতে যোগ দিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে চিঠি দেয় তালেবান। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিষয়ক মুখপাত্র সুহাইল শাহিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

চিঠিতে তালেবান কর্মকর্তারা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকার-নিযুক্ত জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি গোলাম ইসাকজাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসাকজাই আর আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছেন না। এবারের অধিবেশনে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে আবেদন জানানো হয়।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কে বা কারা যোগ দিতে পারবে, তা নির্ধারণ করে সংস্থার নয় সদস্যের একটি কমিটি। এই কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন রয়েছে। এ ব্যাপারে কমিটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হয়নি বলে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ফলে জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে তালেবানের অংশ নেওয়ার সাধ অপূর্ণই রয়ে গেল।

এক কূটনীতিক জানান, জাতিসংঘের কাছে আবেদন পাঠাতে অনেক দেরি করে ফেলেছে তালেবান। এ কারণে গোলাম ইসাকজাইয়ের এই অধিবেশনে অংশ নেওয়ার সুযোগ বহাল রয়েছে।

তিনি এখনো জাতিসংঘ স্বীকৃত আফগান প্রতিনিধি। অধিবেশনের শেষ দিন সোমবার বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দেননি ইসাকজাই। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের আপত্তিতে বক্তব্য দিতে পারেননি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুনও।

মিয়ানমারে গত ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর কিয়াও মোয়ে তুনকে বরখাস্ত করে দেশটির জান্তা সরকার। তার স্থলে একজন সাবেক জেনারেলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তার নিয়োগ অনুমোদন করেনি জাতিসংঘ।

এদিকে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী দখল নেওয়ার পর থেকেই নারীদের চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এবার রাজধানী কাবুলে নারীদের জন্য চালু হওয়া একটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ হতে যাচ্ছে।

এক বছর আগে চালু হওয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা নীলাভ। তিনি জানান, ‘আমি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

৩০ জনের বেশি নারীর ড্রাইভিং শেখার আগ্রহ ছিল। কিন্তু গত এক মাসে কেউই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসেননি।’ মুগ্ধা নামক এক নারী যিনি গত মাসে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ড্রাইভিং শেখেন। বলেন, নারীদের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং অন্যের ওপর যেন নির্ভর করতে না হয় সেজন্য গাড়ি চালানো শিখেছিলাম। আরেক নারী গীতি বলেন, শুধু আমি নই, সব আফগান নারীর কিছু লক্ষ্য রয়েছে যারা বেকার থাকতে চান না।

তালেবানের ভয়েই মূলত নারীরা ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। তালেবান সরকার গঠনের ঘোষণার সময় শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দেয়। নতুন সরকারেও নারীদের কোনো অংশগ্রহণ রাখেনি।