শিরোনাম
জার্মানিসহ ন্যাটো জোটের সদস্যদের মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক সূত্র সতর্ক করে বলেছে, আগামী বুধবার ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ হামলা হতে পারে। তবে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কথাবার্তাকে মার্কিন ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে অভিহিত করেছে।
জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকা গতকাল শনিবার ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ হামলার দিনক্ষণ–সম্পর্কিত খবরটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ও সামরিক সূত্র উভয়ই ন্যাটো জোটের সদস্যদের ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে। এই জরুরি সতর্কতায় বলা হয়, বুধবার ভোরের দিকে ইউক্রেনে হামলা শুরু করতে পারে রাশিয়া।
পশ্চিমাদের ভাষ্যমতে, মস্কো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। সীমান্তে এই রুশ সেনা মোতায়েনের উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনে হামলা চালানো।
তবে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। মস্কো বলছে, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো জোটের ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির জন্য তারা হুমকি বোধ করছে।
ইউক্রেন সংকট নিষ্পত্তির জন্য জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি উভয় পক্ষ সামরিক প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে গত শুক্রবার পশ্চিমা শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা টেলিফোনে আলাপ-আলোচনা করেছেন।
ইউরোপের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা জানিয়েছে, পশ্চিমা শীর্ষ নেতাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল—রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি করে ইউরোপে যুদ্ধ প্রতিরোধ করা।
একটি সংক্ষিপ্ত নোটিশে পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে এই টেলিফোন কনফারেন্স হয়। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন হলে করণীয় বিষয়ে পশ্চিমা নেতারা একমত হয়েছেন।
আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানেরা অংশ নেন।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন প্রথমবারের মতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলেছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালাতে পারে বলে অনেকটা স্পষ্ট করে বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পশ্চিমের সব নেতা বিষয়টিতে এত দিন ততটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু গতকাল থেকে পশ্চিমা নেতাদের ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে সত্যিকারের উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ফেব্রুয়ারির শুরুতে পোল্যান্ডে ১ হাজার ৭০০ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেখানে নতুনভাবে আরও তিন হাজার সেনা যোগ করা হচ্ছে বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
পেন্টাগনের ওই মুখপাত্র বলেন, ন্যাটো জোটভুক্ত মিত্রদের নিরাপত্তা প্রদান ও পূর্ব ইউরোপে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করার জন্যই পোল্যান্ডে অতিরিক্ত মার্কিন সেনার সমাবেশ ঘটানো হয়েছে।
এ ছাড়া মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোকে জার্মানিতে অবস্থিত ঘাঁটি থেকে কৃষ্ণ সাগরের নিকটবর্তী রুমানিয়ার একটি ঘাঁটিতে স্থানান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের উদ্ধৃতি দিয়ে জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকা জানিয়েছে, বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক চলাকালেই ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরু হয়ে যেতে পারে। এই আক্রমণ সম্ভবত যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে শুরু হবে। যাতে বেসামরিক লোকজন নিহত হতে পারে।
জ্যাক সুলিভান মার্কিন নাগরিকদের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও নিজ নিজ নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়তে বলেছে।
ইউক্রেনে বর্তমানে গুরুতর ও অপ্রত্যাশিত অবস্থার বিরাজ করার কথা বলেছে নরওয়ে।
কানাডা তার নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, রাশিয়ার সামরিক পদক্ষেপ শুরু হলে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ ব্যাহত হতে পারে।
ইসরায়েল তার কূটনীতিকদের পরিবারের সদস্যদের ইউক্রেন থেকে বের করে আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও লিথুয়ানিয়ার সরকার তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছেড়ে যেতে বা সাবধানতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছে।
গতকাল জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জরুরি কাজ ছাড়া দেশটির নাগরিকদের ইউক্রেন ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।
নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াও তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আগামীকাল সোমবার কিয়েভ ও মঙ্গলবার মস্কো যাবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মস্কোতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলাপ করবেন।