শিরোনাম
শুধু করোনা নয়, ছয় দশক ধরে অন্য একটা দেশের বাণিজ্যিক অবরোধে থাকাও দুরারোগ্য ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শামিল। সোমবার আমেরিকার চাপানো বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার ৬০ বছর পূর্তিতে বিশাল বিক্ষোভে এমনই স্লোগানই দিল ফিদেল কাস্ত্রোর দেশ কিউবা।
কিউবার প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সমাজমাধ্যম-সহ একাধিক জায়গায় একটাই বার্তা দেওয়া হয়েছে... ‘অবরোধও এক প্রকার ভাইরাস।’ দীর্ঘ ৬০ বছরের এই বাণিজ্যিক অবরোধে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির অর্থনীতি, উন্নয়ন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দেশে, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও।
অবরোধের কারণ একটাই। প্রায় নাকের ডগায় বসে থাকা এই দেশটির শাসনক্ষমতা কমিউনিস্ট পার্টির হাতে।
১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কিউবার উপরে পরিপূর্ণ অবরোধের বিলে সই করেন। তার আগে ১৯৫৮ সালে, বাতিস্তা সরকারের উপরেও অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা। ১৯৬০ সালে কিউবা বিপ্লবের পরে ক্ষমতায় এসেই ফিদেল কাস্ত্রোর সরকার আমেরিকানদের হাতে থাকা তৈল শোধনাগারগুলোকে জাতীয়করণ করে। জাতীয়করণ করা হয় আখ ও সিগারকেও। সেই সময় ‘শাস্তি হিসেবে’ খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া কিউবায় বাকি সব কিছু রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা। তাদের সমর্থন জানিয়ে একই পথে হাঁটে আমেরিকার বন্ধু দেশগুলোও।
শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালের কেনেডির সিদ্ধান্তের পরে আমেরিকা ও আমেরিকাপন্থী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য এক রকম বন্ধ হয়ে যায় কিউবার। কেনেডির দাবি ছিল, কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রতি কিউবার মাত্রাতিরিক্ত সমর্থন থাকার জন্যই এই অবরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সমস্যা তখনও সে রকম প্রবল আকার ধারণ করেনি, কারণ তখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সমর্থন ও সাহায্য পাচ্ছিল কিউবা। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতন ও পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক শিবির ভেঙে পড়ার পর থেকেই সঙ্কটে পড়ে কিউবা। আমেরিকার অবরোধ তোলার জন্য ১৯৯২ সাল থেকে বহুবার দাবি জানায় জাতিসংঘ। পাশ করানো হয় প্রস্তাবও। কিন্তু প্রতিবারই আমেরিকা ও ইসরায়েল এই দাবির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
অবশেষে, ২০০০ সালে এই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে সরানো হয় খাদ্যশস্যকে। কিন্তু এখনও ওষুধ-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করতে পারে না কিউবা। আমেরিকার কারণেই এখনও চাইলেও বহু দেশ সাহায্য করতে পারে না দেশটিকে।
কিউবার প্রশাসনের দাবি, কোনও দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধের সবচেয়ে নিষ্ঠুর অস্ত্র বাণিজ্যিক অবরোধ। ছয় দশকের এই অবরোধের ফলে দেশের মোট ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার কোটি ডলার। ৩০ বছর ধরে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে দেশটি। মূল্যবৃদ্ধির হার সে দেশে বর্তমানে ৭০ শতাংশ। অভাব রয়েছে খাবার ও ওষুধেরও। এর উপর আঘাত হেনেছে দীর্ঘদিনের এই মহামারী। করোনার আক্রমণে দেশটির অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস— পর্যটন শিল্প বড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলে অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়েছে।
কেনেডি থেকে জো বাইডেন— একের পর এক প্রেসিডেন্টের আমলে বহু নীতি বদল হয়েছে আমেরিকার। শুধু বদল হয়নি প্রতিবেশি সমাজতান্ত্রিক দেশটির প্রতি অবরোধের নীতি।
সূত্র: ফ্রান্স২৪