শিরোনাম
প্রায় চার দশক আগে অভাবের সময় বন্ধুর কাছ থেকে অর্থ ধার করেছিলেন এক ব্যক্তি। পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আর ঋণ শোধ করা হয়নি। কিন্তু বিবেক তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে সারাজীবন। একপর্যায়ে দেনা না মিটিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন সেই ব্যক্তি। কিন্তু যাওয়ার আগে সন্তানদের জানিয়ে যান তার শেষ ইচ্ছা- ৪০ বছর আগের সেই ঋণ যেন তারা শোধ করে দেয়। এরপর থেকে পাওনাদারকে খুঁজতে উঠেপড়ে লাগে গোটা পরিবার। দেওয়া হয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও। কিন্তু তারপর থেকে সমস্যা যেন শুধু বেড়েই চলেছে। একের পর এক লোক নিজেকে পাওনাদার দাবি করে ফোন দিচ্ছে।
ধার নেওয়া সেই ব্যক্তির নাম হাবিবুল্লাহ। বাড়ি ভারতের কেরালা রাজ্যের তিরুবনন্তপুরমে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি দুবাইয়ে থাকাকালীন লুসিস নামে এক রুমমেটের কাছ থেকে এক হাজার আমিরাতি দিরহাম (বর্তমান ২০ হাজার রুপি প্রায়) ধার নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কেরালা ফিরে আসেন হাবিবুল্লাহ। এরপর থেকে লুসিসের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।
কিছুদিন আগে ৮৩ বছর বয়সে মারা গেছেন হাবিবুল্লাহ। বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণে গত সপ্তাহে স্থানীয় একটি দৈনিকে পাওনাদারের খোঁজ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন তার ছেলেরা।
হাবিবুল্লাহর দ্বিতীয় পুত্র নাজার বলেন, আমরা বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বাবা আমাদের ঋণের ব্যাপারে বছর দুয়েক আগে প্রথম জানান। সেই থেকে আমরা লুসিসকে খোঁজার চেষ্টা করছি। যদিও আমরা তার পুরো নাম জানি না, কখনো দেখাও হয়নি।
হাবিবুল্লাহও লুসিসের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানিয়ে যেতে পারেননি। শুধু বলেছেন, তার বাড়ি তিরুবনন্তপুরমের পাশের জেলা কোল্লামে এবং ছোট ভাইয়ের নাম বেবি।
বাবার মৃত্যুর পর হাবিবুল্লাহর সন্তানেরা হোয়াটসঅ্যাপে খবর ছড়িয়ে লুসিসকে খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। এ কারণে স্থানীয় একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। গত ৩১ জানুয়ারি একটি মালয়ালাম সংবাদপত্রে টাকা পরিশোধের কথা উল্লেখ করে সেই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই শুরু আজব ঝামেলার।
একাধিক ব্যক্তি নিজেকে লুসিসের আত্মীয় দাবি করতে শুরু করেন। বিজ্ঞাপনে নিজের ফোন নাম্বার দিয়েছিলেন নাজার। সেই ফোন সারাদিন বেজে চলেছে। দু’জন দাবি করেছেন, তাদের বাবা লুসিস। তার মৃত্যু হয়েছে। একজন ফোন করে বলেছেন, তার বাবা লুসিস, তবে তাদের অর্থের প্রয়োজন নেই। এক ব্যক্তি নিজেকে লুসিসের সন্তান দাবি করে পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কারণ, তাদের আর্থিক অবস্থা নাকি ভালো নেই।
এর মধ্যে একজনের খোঁজ পেয়েছেন নাজার, যিনি তার বাবা ও লুসিস উভয়কেই চিনতেন। তার নাম রশিদ। এখন রশিদের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন নাজার। দাবিদারদের লুসিসের ছবি নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন ছবিও পাঠিয়েছেন। সেগুলো দেখে রশিদ অবশ্য জানিয়েছেন, এদের কেউই সেই লুসিস নন।
তবে হাল ছাড়তে রাজি নন নাজার। তিনি বলেছেন, সত্তরের দশকে বাবাকে যে অর্থ দিয়েছিলেন লুসিস, সেই সময়ের বাজারমূল্য হিসাব করে প্রয়োজনে বেশি অর্থ দিতে রাজি আমরা। কিন্তু বাবার নামে কোনো দেনা রাখতে চাই না।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ