শিরোনাম
আসামের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে। গত শুক্রবার এক রায়ে আসামের হাইকোর্ট জানান, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলো এখন থেকে সাধারণ স্কুলের মর্যাদায় পরিচালিত হবে এবং স্কুল শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে থেকে তাদের কাজ করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার আর কোনো ব্যাপার থাকছে না।
২০২০ সালে আসামের শিক্ষাসংক্রান্ত আসাম মাদ্রাসা এডুকেশন আইন–১৯৯৫ ও আসাম মাদ্রাসা এডুকেশন (রিঅর্গানাইজেশন) ২০১৮—দুটি আইনকে সংশোধন করে নতুন একটি আইন করা হয়, যার নাম দেওয়া হয় আসাম রিপিলিং অ্যাক্ট–২০২০। সেই আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন পেশার ১৩ জন হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, যা খারিজ করে দিয়ে গতকাল আসাম হাইকোর্ট বলেছেন, আইনটি বৈধ।
আবেদনকারীরা বলেছিলেন, সংবিধানে সব ধর্ম অনুশীলনের যে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এই আইন সেই অনুমতিকে লঙ্ঘন করছে। এ প্রসঙ্গে আদালতে আসাম সরকারের আইনজীবী জেনারেল ডি শইকীয়া বলেন, অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসার ক্ষেত্রেই এ আইন প্রযোজ্য হবে। তিনি আরও বলেন, যে মাদ্রাসাগুলো সম্প্রদায় থেকে চালানো হয় বা কওমি মাদ্রাসা ও মক্তব এ আইনের আওতায় পড়ছে না। ফলে এটি কোনোভাবেই সংবিধানকে লঙ্ঘন করছে না।
রায়ে আসামের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি সৌমিত্র শইকীয়া ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ‘আমরা একটি গণতন্ত্রে বাস করি। এখানে আইনের চোখে সব ধর্ম সমান। সেই কারণে কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া যাবে না। এটি একটি বহু ধর্মের দেশ, কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে সুবিধা দিলে তা সংবিধানের আর্টিকেল ১৪ এবং আর্টিকেল ১৫ লঙ্ঘনের শামিল হবে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকাঠামোর অর্থ হলো সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় নীতি নির্দেশ দেওয়া যাবে না।’
এই নতুন আইনটির ফলে শুধু ধর্মীয় শিক্ষা এবং নীতিনির্দেশনাই বন্ধ হয়ে যাবে তা–ই নয়, মাদ্রাসার ব্যবস্থার মধ্যে থেকে নতুন ছাত্র নেওয়া যাবে না। বস্তুত ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তি বন্ধ আছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে এবং তার সব নথি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্কুল শিক্ষা পর্ষদের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা তুলে দিয়ে, সাধারণ স্কুলে যা পড়ানো হয় সেই ব্যবস্থাও ইতিমধ্যে সরকার চালু করেছে। যাঁরা মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁরা যাতে নতুন ব্যবস্থায় কাজ করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এককথায় বলতে গেলে আসামে স্বাধীনতার আগে থেকে যে মাদ্রাসা শিক্ষাপদ্ধতি ছিল তা তুলে দেওয়া হলো।’