শিরোনাম
জবরদখল করা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড থেকে সরে যেতে ইসরায়েলকে এক বছরের সময় বেঁধে দিয়েছেন ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস। দেশটিকে এই চরমপত্র দিয়ে তিনি বলেছেন, ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে তিনি কখনোই ইহুদি রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেবেন না। এএফপি ও রয়টার্সের খবর।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে গত শুক্রবার ভাষণ দেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ভাষণে ইসরায়েলকে ওই সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি।
ভার্চ্যুয়ালি দেওয়া এ ভাষণে মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসন মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আহ্বান করার অনুরোধ জানান।
প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বলতে হবে, ১৯৬৭ সালে দখলদার ইসরায়েলের পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করে নেওয়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে এক বছরের মধ্যে চলে যেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে জাতিসংঘের প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতি রেখে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের চূড়ান্ত মর্যাদা নির্ধারণ প্রশ্নে বছরজুড়ে কাজ করতে তৈরি আছে ফিলিস্তিন।
মাহমুদ আব্বাস বলেন, যদি এটি অর্জন করা না যায়, তবে ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে স্বীকৃতি দেওয়ার দরকার কী? তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করার ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে যাবে ফিলিস্তিনিরা।
তবে ফিলিস্তিনি নেতার এসব বক্তব্য অগ্রাহ্য করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘে দখলদার ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরডান বলেছেন, আব্বাস আবার প্রমাণ করলেন, তাঁর কথার আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। তিনি বলেন, যাঁরা সত্যিকার অর্থে শান্তি ও সমঝোতা সমর্থন করেন, তাঁরা জাতিসংঘের মতো প্ল্যাটফর্মে এ রকম বিভ্রান্তিমূলক আলটিমেটামের হুমকি দেন না।
খবরে বলা হয়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অর্জনে মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হওয়া শান্তি প্রক্রিয়া থমকে আছে।
প্রেসিডেন্ট আব্বাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের উদ্যোগ নস্যাৎ করার অভিযোগ করেন। পশ্চিম তীর থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অধিবেশনে অংশ নিয়ে দেওয়া এ ভাষণে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ওই ফর্মুলা রক্ষায় কাজ করার অনুরোধ জানান।
মাহমুদ আব্বাস বলেন, ১৯৬৭ সালে হওয়া মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখল করে নিয়ে সেখানে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছানোর ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
বিশ্ব সম্প্রদায় ইসরায়েলের এ কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও অবৈধ বলে বিবেচনা করলেও দেশটি এর সঙ্গে একমত নয়।
ভাষণে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতি বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। তবে ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।
অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনকে নিয়ে কোনো এক রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ যৌক্তিক হবে না। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও জনসংখ্যা তাত্ত্বিক নানা কারণে এটা সম্ভব নয়। বিশেষ করে ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, এক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে তা তার স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষাকে গুঁড়িয়ে দেবে।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া তাঁর ভাষণে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ধারণার প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি যৌক্তিক ও গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক ইসরায়েল রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ উপস্থিতিই নিশ্চিত করবে।
সূত্র: প্রথম আলো