শিরোনাম
২০১১ সাল। বিক্ষোভে উত্তাল চিলি। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন আর সমানাধিকারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে ছাত্রছাত্রীরা। সেই আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি মেয়ে। নাম ক্যামিলা ভ্যালেজো। বয়স মাত্র ২৩। রাজধানী সান্তিয়াগোর ইউনিভার্সিটি অব চিলির ছাত্রী। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের আড্ডায়, রাজপথের মিছিল-মিটিং সবখানে সমানভাবে উপস্থিত। আয়ত ও বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, সদালাপী আর তুখোড় মেধার মেয়েটি ক্যাম্পাসের অনেকের কাছেই পরিচিত ‘সুন্দরী বিপ্লবী’ বলে। মাত্র ১১ বছর পর সেই সুন্দরী বিপ্লবীই এখন চিলির সদ্য গঠিত সরকারের মন্ত্রী। সূত্র: যুগান্তর
নির্বাচিত হওয়ার পর এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিস। শুক্রবার ঘোষণা করা ২৪ সদস্যের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্যই নারী (১৪ জন)। প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে মায়া ফার্নান্দেজকে। তিনি সাবেক সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দের নাতনি। সালভাদর ১৯৭৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ভ্যালেজোকে সরকারের মুখপাত্র করেছেন বোরিস। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ড. ইজকিয়া সিচেস। মন্ত্রিসভা ঘোষণার পর ৩৬ বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট বোরিস বলেন, ‘আমরা এই দলটি এমন লোকদের নিয়ে তৈরি করেছি যারা দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তারা দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ আগামী মার্চ মাস থেকে দায়িত্ব কাজ শুরু করবে নতুন এই মন্ত্রিসভা। সরকারের মিনিস্ট্রি সেক্রেটারিয়েট জেনারেল অব গভর্নমেন্টের মন্ত্রী ও সেই সঙ্গে মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন ভ্যালেজো। পুরো নাম ক্যামিলা অ্যান্টোনিয়া আমারান্তা ভ্যালেজো ডোলিং। ১৯৮৮ সালের ২৮ এপ্রিলে সান্তিয়াগোতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা রেনাল্ডো ভ্যালেজো ও মা মারিয়েলা ডোলিং উভয়ই চিলির কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও একনায়ক অগাস্তো পিনোশের স্বৈরশাসনবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। স্কুল-কলেজ শেষ করার পর ভ্যালেজো ২০০৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব চিলিতে ভূগোলশাস্ত্রে ভর্তি হন এবং দ্রুতই বামপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
২০০৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব চিলির ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। দুই বছর পরই (২০১০ সালে) সংগঠনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। ‘চিলিয়ান উইন্টার’ নামে প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে ছাত্র-জনতা। এ আন্দোলনে ছাত্রনেতা গ্যাব্রিয়েল বোরিস ও গিওর্গিও জ্যাকসনের পাশাপাশি অন্যতম প্রভাবশালী নেতৃত্ব হয়ে ওঠেন ভ্যালেজো। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের সীমানা পেরিয়ে তার নাম ছড়িয়ে বিশ্বের অন্য প্রান্তেও।
ছাত্র আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ নেতৃত্বের কারণে ওই বছর ভ্যালোজোকে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত করে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। ২০১২ সালে ৫ এপ্রিল ভ্যালোজোকে নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করে খ্যাতনামা মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ‘ক্যামিলা ভ্যালেজো, দ্য ওয়ার্ল্ড মোস্ট গ্লামারাস রিভোল্যুশনারি’ শীর্ষক ৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে তাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী বিপ্লবী’ হিসাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়। ২০১৩ সালে ভ্যালেজোর পড়াশুনা শেষ হয় এবং স্বাভাবিকভাবে ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। ২০১৩ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে তাকে কমিউনিস্ট পার্টি অব চিলির সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে রেকর্ড ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হন ভ্যালেজো।
২০১৭ সালের নির্বাচনেও জয়ের ধারা অক্ষুণ্ন থাকে। বর্তমানে ৩৩ বছর বয়সি এই নারী রাজনীতিক ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও এক কন্যা সন্তানের জননী।