শিরোনাম
মহাসাগরে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত এবং সৃষ্ট সুনামিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে টোঙ্গা। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের এক সপ্তাহ পর দেশটিতে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটও। দেশটিতে খাদ্যের জন্য যে জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্র টোঙ্গার মাঠ-ঘাট ছাইয়ে ঢেকে গেছে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে এখনো দেশটির বিভিন্ন এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমও।
ডব্লিউএইচওর স্থানীয় লিয়াজোঁ অফিসের কর্মকর্তা ইউতারো সেতোয়া বলেন, আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কারণে বহু ফসল ধ্বংস হয়েছে দেশটির। ছোট দ্বীপটিতে জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো এবং টোঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দা জেমা মালুঙ্গাহু বলেন, জটিল বিষয় হচ্ছে যে, ফসলের ছাই ধুয়ে ফেলার জন্য জলের সংকট তৈরি হয়েছে। টোঙ্গাবাসীর নিজেদের উৎপাদিত খাবার গ্রহণ এখন নিরাপদ কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, যেখানে তাদের খাদ্য শস্য ধোয়ার জন্য পরিষ্কার পানি নেই।
দেশটিতে বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ট্যাংকগুলোও ছাইয়ে ভরে গেছে। টোঙ্গার রাজধানী নুকুয়ালোফায় অবস্থিত ডব্লিউএইচওর অফিস থেকে স্থানীয়দের দূষিত পানি পান না করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পানি বিশুদ্ধকরণের পর সেটি পান করা যায়, তবে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে তিনি জানান যে, দুর্যোগকবলিত এলাকার অনেক মানুষ এখন বোতলজাত পানি পান করছেন।
টোঙ্গা বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের জন্য আমদানির উপর নির্ভরশীল। দেশটির সরবরাহ ব্যবস্থা যত বেশি সময় পর্যন্ত ব্যাহত হবে ততদিন এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে দেশটির সাধারণ মানুষের ওপর।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্যমতে, ২০২০ সালে টোঙ্গার সবচেয়ে বেশি আমদানি করে পেট্রোলিয়াম ও কয়লা জ্বালানি। আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ শতাংশ। দেশটিতে অপরিশোধিত তেলের মজুদ কম হতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। একই সময়ে দেশটি মাংস আমদানি করে ৯ শতাংশ।
ডব্লিউএইচওর স্থানীয় কর্মকর্তা ইউতারো সেতোয়া ১৫ জানুয়ারি দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে রাজধানীতে ছিলেন, যখন টোঙ্গা হাঙ্গা টোঙ্গা-হাঙ্গা হা’পাই আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাটি ঘটে। সেখান থেকেও ঘটনার আঁচ পান তিনি।
তিনি বলেন, দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি সচল হতে আরও সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এখনো ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা সচল করা যায়নি। কেবল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে আন্তর্জাতিক ফোনকলের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন দেশটির মূল ভূ-খন্ড টোঙ্গাতাপুতে একশ বাড়িঘর ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে সেখানে।
এদিকে, টোঙ্গা সরকারের জরুরি সহায়তা আহ্বানের পর গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ড ত্রাণ সহায়তা নিয়ে জাহাজ ও হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে টোঙ্গার উদ্দেশ্য রওনা দেন। জাপানও সহায়তা পাঠিয়েছে দেশটিতে। এছাড়া চীন সরকার বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সহায়তার পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
টোকিওভিত্তিক সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ হিদেইউকি শিওজাওয়া বলেন, আগামীতে শুধু ক্ষয়ক্ষতি পূরণে মনোযোগী হলে হবে না বরং ভবিষ্যৎ বিপর্যয় ঠেকাতে একটি স্থিতিস্থাপক সমাজ তৈরিতেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনায় মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তোলা ছবি প্রকাশ পায়। প্রথমবারের মতো প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, পুরো টোঙ্গা কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ে ঢেকে গেছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এটি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা।
হাঙ্গা টোঙ্গা-হাঙ্গা হা’পাই নামের আগ্নেয়গিরিটিতে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে গত শনিবার। এরপর পুরো প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ে। টোঙ্গার রাজধানী থেকে আগ্নেয়গিরিটি ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ঘটনাস্থল থেকে নিউজিল্যান্ডের দূরত্ব দুই হাজার ৩০০ কিলোমিটার এবং ফিজির দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার।
অগ্ন্যুতপাতের পর সৃষ্ট সুনামির ঢেউ আঘাত হানে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান উপকূলেও। প্রচণ্ড ঢেউয়ে পেরুতে মার গেছেন দুইজন। আগ্নেয়গিরিটি ভূমিকম্পের দিক থেকে অত্যন্ত সক্রিয় প্যাসিফিক রিং অব ফায়ারের ওপরেই অবস্থিত বলে জানা গেছে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া