শিরোনাম
ভারতে কোনো হিন্দু বাবা মৃত্যুর আগে ইচ্ছাপত্র বা উইল না করে গেলে তাঁর মেয়ে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে অগ্রাধিকার পাবেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে এ কথা বলা হয়। এ–সংক্রান্ত একটি আদেশ খারিজ করে বৃহস্পতিবার ভারতের শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এস আবদুল নাজির ও বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারির বেঞ্চ ওই সিদ্ধান্ত দেন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, উইল করার আগে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কে হবেন—এ প্রশ্নে আদালত জানান, তাঁর সম্পত্তিতে ভাইয়ের সন্তানদের চেয়ে নিজের মেয়ের অধিকার বেশি থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টের ওই বেঞ্চ বলেন, উইল তৈরির আগে কোনো হিন্দু পুরুষের মৃত্যু হলে তাঁর সম্পত্তি (অর্জিত ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত) সব উত্তরাধিকারীর মধ্যে বণ্টন করা হবে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির মেয়ে তাঁর অন্য আত্মীয়দের (ভাইয়ের সন্তানদের) তুলনায় সম্পত্তির উত্তরাধিকারে অগ্রাধিকার পাবেন।
এর আগে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের আওতায় সম্পত্তিতে হিন্দু নারী ও বিধবাদের অধিকার নিয়ে রায় দিয়েছিলেন মাদ্রাজ হাইকোর্ট। ওই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়। ওই আপিলের পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন এই রায় এল।
ঐতিহাসিক এ রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেন, এই রায়ের উদ্দেশ্য হলো হিন্দু নারীদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে নিরঙ্কুশ অধিকার দাবির সীমাবদ্ধতা দূর করা। ভারতের হিন্দু নারীরা এত দিন উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া সম্পত্তি শুধু জীবিত অবস্থায় ভোগদখল করতে পারতেন।
আদালত জানান, মৃত ব্যক্তি নিজে সম্পত্তি করে থাকলে তিনি যৌথ পরিবারে বসবাস করলেও তাঁর সেই সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন শুধু তাঁর মেয়ে। অবশ্য ছেলে থাকলে সম্পত্তির বণ্টন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়নি এ রায়ে।
ভারতে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করা হয়েছিল ২০০৫ সালে। সেখানে বলা হয়েছিল, বাবার মৃত্যুর পর ছেলেদের মতো মেয়েরাও পারিবারিক সম্পত্তির সমান অধিকার পাবেন। পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে বলেছিলেন, ২০০৫ সালে আইন হলেও এই আইনে নারীরা সম্পত্তির অধিকার পাবেন ১৯৫৬ সাল থেকেই।
ভারতের হিন্দু পরিবারের একটি প্রচলিত ভাবনা হলো, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে তিনি স্বামীর বাড়ির অংশ হয়ে যান। পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার তখন আর তাঁর থাকে না। ছেলেহীন বাবার সম্পত্তি পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয়। বাবা উইল করে না গেলে মেয়ে হন বঞ্চিত।
সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিনের ওই বঞ্চনার অবসান ঘটবে বলে অধিকারকর্মীদের প্রত্যাশা।