শিরোনাম
৫০ বছরের ধারাবাহিকতার অবসান ঘটল শুক্রবার বেলা তিনটায়। ভারতের রাজধানী দিল্লির রাজপথে ‘ইন্ডিয়া গেট’–এর সামনে একাত্তরের যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে প্রজ্বলিত ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ নিভে গেল। সেখানকার প্রজ্বলিত শিখা মিশিয়ে দেওয়া হলো অনতিদূরে স্থাপিত জাতীয় যুদ্ধস্মারকের অগ্নিশিখার সঙ্গে। ভারতের চিফ এয়ার মার্শাল বলভদ্র রাধাকৃষ্ণ সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে দুই শিখার মিলন ঘটান।
১৯৭১ সালে ভারত–পাকিস্তানের যুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বীর শহীদ জওয়ানদের স্মরণে ইন্ডিয়া গেটের সামনে তৈরি করিয়েছিলেন ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’। সেই থেকে একটানা ৫০ বছর ধরে ওই শিখা অনির্বাণ ছিল। প্রতিবছর প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর অমর জওয়ান জ্যোতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ছিল রাষ্ট্রীয় রীতি। সেই শিখা শুক্রবার নিভে গেল সরকারি সিদ্ধান্তে। ইন্ডিয়া গেটের অনতিদূরে ২০১৯ সালে মোদি–স্থাপিত জাতীয় যুদ্ধস্মারকের প্রজ্বলিত শিখার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হলো সেটিকে। একদিকে দেশজোড়া প্রবল প্রতিবাদ, অন্যদিকে সরকার সমর্থকদের সমর্থনের মাঝে কংগ্রেস নির্মিত আরও এক নিদর্শনের অবসান ঘটানো হলো। সেই সঙ্গে শাসককুল এগিয়ে গেল কংগ্রেসমুক্ত ভারত গঠনের পথে আরও এক ধাপ।
‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ নিভিয়ে দেওয়ার কথা জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার। সেই থেকে দেশজুড়ে প্রতিবাদের জবাবে শুক্রবার সকালে সরকারি সূত্র জানায়, ইন্ডিয়া গেটে অমর জওয়ান জ্যোতি নেভানো হচ্ছে না। বরং তা স্থানান্তরিত হচ্ছে জাতীয় যুদ্ধস্মারকে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ব্রিটিশদের তৈরি ইন্ডিয়া গেটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার সেনানীদের নাম রয়েছে শুধু। স্বাধীন ভারতের শহীদ সেনানীদের নাম নেই। জাতীয় যুদ্ধস্মারকে রাখা হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানের সংঘর্ষ পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হওয়া ২৫ হাজার ৯৪২ জন জওয়ানের নাম। ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ সেখানেই স্থানান্তরিত হচ্ছে। শহীদ জওয়ানেরা স্বীকৃতি পাবেন ভারতীয়দের তৈরি স্মারকে।
২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মোদি জাতীয় যুদ্ধস্মারক উদ্বোধন করেছিলেন। সেখানে বৃত্তাকারে তৈরি গ্রানাইটের স্ল্যাবে লেখা রয়েছে স্বাধীনতা–উত্তর ভারতের প্রতিটি যুদ্ধে নিহত জওয়ানদের নাম। তাতে স্থান পেয়েছেন একাত্তরের শহীদেরাও। বিরোধীদের বক্তব্য, ইন্দিরা গান্ধীর তৈরি ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ ইতিহাসের এক অঙ্গ।
৫০ বছরের ধারাবাহিকতার অবসান না ঘটিয়ে ওই শিখাও প্রজ্বলিত রাখা যেত। বিরোধীদের কটাক্ষ করে শাসক দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এত বছর রাজত্ব করেও কংগ্রেস কোনো স্মারক তৈরি করতে পারেনি। মোদি জমানায় যা সম্ভব হলো।
প্রধানমন্ত্রী মোদি শুক্রবারই এক টুইটে জানান, ইন্ডিয়া গেটের পূর্ব প্রান্তে দেড় শ মিটার দূরে থাকা ছাউনিতে বসানো হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি। নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সিদ্ধান্ত। টুইটে তিনি বলেন, দেশ তাঁর কাছে ঋণী। তাঁরই প্রতীক হবে ওই মূর্তি। যত দিন না সেই বিশাল গ্রানাইট মূর্তি তৈরি হচ্ছে, তত দিন ওখানে নেতাজির হলোগ্রাম মূর্তি রাখা হবে। আগামীকাল রোববার নেতাজির জন্মদিনে তা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।