সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছিল ভুয়া লাইসেন্সধারী ৮২ ট্রাকচালক

ফানাম নিউজ
  ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০২:০৯

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির কাজে চলাচলকারী ৮২ ট্রাকচালকের কাছে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) ও সোমবার (১৭ জানুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল চেকপোস্টে বিএসএফের বিশেষ অভিযানে বিষয়টি ধরা পড়ে।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র কৃষ্ণা রাও হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের সীমান্ত পেরিয়ে চলাচল করতে দেওয়া যাবে না বলে ভারতীয় শুল্ক বিভাগ ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশের কাছে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কৃষ্ণা জানান, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিয়োজিত বেশ কিছু ট্রাকচালক স্বর্ণ, কাশির সিরাপ, ওষুধ চোরাচালানের মতো আন্তঃসীমান্ত অপরাধে জড়িত থাকার খবর পেয়েছিল বিএসএফ। এর ভিত্তিতেই পরপর দুদিন পেট্রাপোল চেকপোস্টে আচমকা অভিযান চালানো হয়।

রোববারের অভিযানে ৫২টি ও পরেরদিন ৩০টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পান বিএসএফ কর্মকর্তারা। সেগুলো শুল্ক বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র।

তিনি বলেন, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকদের কোনোভাবেই বাংলাদেশে ট্রাক নিয়ে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এরা ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করে শুল্ক বিভাগ থেকে জাল গাড়ি পাস নিতো।

এ ঘটনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছে বিএসএফ।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর বৃহত্তম স্থলবন্দর। বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে উভয় দেশের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং। দ্বিপাক্ষিক স্থল বাণিজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ হয় এই একটি ক্রসিং দিয়ে। প্রতি বছর বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে উভয় দিক থেকে গড়ে ২২ লাখ মানুষ সীমান্ত পার হয়। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

পেট্রাপোলে হঠাৎ বিএসএফের নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষ্ণা রাও জানান, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা গত ৪ জানুয়ারি মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টার সময় এক ব্যক্তির কাছ থেকে আনুমানিক ১ কোটি ৪০ লাখ রুপি (১ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রায়) সমমূল্যের চোরাচালানের স্বর্ণ জব্দ করে। সেগুলো ট্রাকে লুকিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছিল।

গত বছরের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এক ভারতীয় ট্রাকচালকের কাছ থেকে ১ কোটি ৭১ লাখ রুপির স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এর কয়েকদিন পরে ২১ আগস্ট রপ্তানিপণ্য আনলোড করে বাংলাদেশ থেকে ফেরা একটি খালি ভারতীয় ট্রাক থেকে ১ কোটি ৬৮ লাখ রুপি সমমূল্যের সৌদি রিয়াল উদ্ধার করা হয়। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আরেকটি ভারতীয় ট্রাক থেকে ৫০ কেজি মারিজুয়ানা জব্দ করে বিএসএফ। এছাড়াও গত কয়েক মাসে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের অবৈধ পণ্য জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

বিএসএফ মুখপাত্র বলেন, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে ভারতীয় পরিবহনকারী, শ্রমিক, চালক, সহকারীসহ বিভিন্ন এজেন্ট ও সাব-এজেন্টদের ভূমিকা প্রমাণিত। তাছাড়া, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের মাধ্যমে নানা সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত বছরের অক্টোবরে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক বিএসএফ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। তাই সীমান্ত দিয়ে চলাচলকারী সব চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।