শিরোনাম
জনসমুদ্র থেকে একে একে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে আফগান নারীর মুখগুলো। এমন চার নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। চার মাস ধরে নিয়মিত ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই নারীদের জীবন সম্পর্কে জেনেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
তালেবান রাজত্বের আফগানিস্তানে অনেক নারীর জীবন বদলে গেছে। তালেবান ক্ষমতায় আসার ছয় মাস আগেও রাজধানী কাবুল ও অন্য শহরগুলো হাতের পাতার মতো চিনতেন এই নারীরা। শ্রেণিকক্ষ ও কর্মস্থলে ছিল অবাধ বিচরণ। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে নিজের পরিচিত জগৎটা অচেনা হয়ে গেছে। এই নারীদের দেশ আফগানিস্তান। কিন্তু সেখানকার কোনো কিছুই যেন তাঁদের নিজের নয়।
সমাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখা অনেক নারীকেই এখন লুকিয়ে থাকতে হয় ঘরে। নিজের ব্যবসাটা দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখতেন যে নারী, আরও উচ্চতর ডিগ্রি নেবেন বলে পরিকল্পনা করতেন যে নারী, সেই নারীরা এখন টিকে থাকার লড়াই করছেন।
তালেবান শাসনামলে আফগান নারীদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র এখন নিষেধের বেড়াজালে বন্দী। তালেবানের দেওয়া নারী অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ক্ষমতা দখলের ছয় মাস পরও দেখেননি আফগান নারীরা। মেয়েশিশু ও নারীদের জন্য মাধ্যমিক স্কুলের দরজা এখনো বন্ধ।
জনসমুদ্র থেকে একে একে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে আফগান নারীর মুখগুলো। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। গত বছরের আগস্ট মাসে তালেবানের কাবুল দখলের পর রাতারাতি বদলে গিয়েছিল একটি পারলার। সেটির জানালায় নারীদের ছবি ও পোস্টার সাজানো ছিল। তালেবানদের দৃষ্টি এড়াতে ছবিগুলো কালো রং দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়। ওই ছবিগুলোর মতোই সে সময় থেকে কালো আঁধারে ঢেকে গেছে অনেক আফগান নারীর জীবন।
টিভির নাটকে নারীদের দক্ষ অভিনয়ে দর্শকেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকতেন। থেমে গেছে সেগুলোও। গত নভেম্বরে টিভি নাটকে নারীদের অভিনয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ইচ্ছেমতো যখন-তখন বেড়াতে যাওয়ার পথও প্রায় বন্ধ। গত মাসে ট্যাক্সিচালকদের পুরুষ অভিভাবক ছাড়া ৪৫ মাইলের বেশি দূরে নারী যাত্রী নিতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। দূরের পথে একা ঘুরতে যাওয়া তো বন্ধ। ঘরে দম বন্ধ মনে হলে কাছাকাছি দূরত্বে প্রতিবেশীর কাছে যেতেও অনেক সময় বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে নারীদের।
এমনই চার নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। চার মাস ধরে নিয়মিত ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই নারীদের জীবন সম্পর্কে জেনেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তাঁরা সবাই সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের। তালেবানের হাতে দীর্ঘদিন ধরেই নির্যাতিত শিয়া সম্প্রদায়। গত দুই দশকে সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের নারীদের সামনে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে তালেবান ফিরে আসায় তাঁরা এখন সবই হারানোর শঙ্কায়।
বিপদের ভয়ে নিজেদের নামের আদ্যক্ষর অথবা সংক্ষিপ্ত নাম প্রকাশের শর্তে ওয়াশিংটন পোস্টের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছেন এই চার নারী। তাঁদের মধ্যে সাজিদা, কে (নামের আদ্যক্ষর) ও পাহলাওয়ান কাবুলের বাসিন্দা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলিয়া ছিলেন আফগানিস্তানের উত্তরে।ক্ষমতা দখলের পর থেকে জীবনের প্রতি পদে তালেবানের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার গল্পই শুনিয়েছেন এই নারীরা।
শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন তিনি
গত আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর অনেক নারী দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আফগানিস্তানের উত্তরে মাজার-ই-শরিফ শহর পতনের এক সপ্তাহ পর ২৭ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আলিয়া অনুভব করেন, তাঁর অতীতের বর্ণিল জীবন হঠাৎই ফিকে হয়ে গেছে।
সে সময় আলিয়া ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আমি অপেক্ষা করছি, অপেক্ষা করতে করতে ছাদের কড়ি গুনতে শুরু করেছি। আমাদের নিয়ে কী সিদ্ধান্ত আসছে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করছি।’
২০১৯ সালে ইরানে পড়াশোনার সময় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের জন্য গ্রিন কার্ডের আবেদন করেছিলেন আলিয়া। এক বছর পর গ্রিন কার্ডের চিঠি আসে। সে সময় সুখ–দুঃখের মিশেলে অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় আলিয়ার। তিনি জানতেন, যুক্তরাষ্ট্রে গেলে মুক্ত জীবনে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে নিজ দেশ আফগানিস্তানের নারীদের শিক্ষিত করার তাগিদ ছিল মনে। তাঁর মনে হয়েছিল, আফগানিস্তানে নির্যাতনের শিকার নারীদের পাশে দাঁড়াতেই হবে। তাঁদের বলতে হবে ‘আমি পাশে আছি। আমি তোমাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে তালেবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলে। আলিয়া যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন, সেখানেও শিক্ষার্থীদের ফিরে আসার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘সব শিক্ষার্থী ও কর্মীকে হিজাব পরতে হবে। আর হিজাবের রং কালো হতে হবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রচলিত কালো আবায়া, কালো মোজা ও দস্তানা পরা নারীর ছবি উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়।
কালো রঙের পোশাকের এই বাধ্যবাধকতা মেনে নিতে পারেননি আলিয়া। তিনি সব সময়ই রক্ষণশীল পোশাকে অভ্যস্ত। তাঁর পোশাকগুলো রঙিনও। সেই পোশাকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলিয়াকে বাড়ি ফিরে গিয়ে পোশাক বদলে আসতে বলেন।
শিক্ষকতায় ফেরার পর পুরোনো শিক্ষার্থীদের অনেককে খুঁজে পাননি আলিয়া। অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়াশোনা শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন।
আলিয়া বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গিয়েছি, কারণ আমি চাইনি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার অধিকার থেকে বঞ্চিত হোক। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে না ফিরলে আমি প্রতিদিনের হতাশা ও বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে পারতাম না।’
‘হাতে বন্দুক নেই, গলায় তো আওয়াজ আছে’
২৭ বছর বয়সী পেহলাওয়ান আলোকচিত্র বিষয়ের শিক্ষার্থী। তিনি একজন কবিও। মা-বাবাকে না জানিয়ে তালেবানের ক্ষমতা দখলের শুরুর দিকে প্রথমবার বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন পেহলাওয়ান। সেই বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছিল তালেবান। তবে কাউকে মারধর করেনি তারা। বিক্ষোভের শুরুটা ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে।
৮ সেপ্টেম্বর আবার বিক্ষোভে অংশ নেন পেহলাওয়ান। বাবার নিষেধ শোনেননি সেদিন। তবে সেদিনের অভিজ্ঞতা ছিল অন্য রকম। সেদিন আর খুব বেশি ধৈর্যের পরিচয় দেয়নি তালেবান। তালেবান রাবারের পাইপ দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছাত্রভঙ্গ করে। ভিড়ের মধ্যে হাত থেকে মুঠোফোন পড়ে যায় পেহলাওয়ানের। সেটি তোলার সময় তালেবানের একজন সদস্য পেছন থেকে পেটায় তাঁকে। এরপর বাবা পেহলাওয়ানের বিক্ষোভ মিছিলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তবে দমে যাননি পেহলাওয়ান। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য আমার হাতে বন্দুক ছিল না। তাতে কী। আমি তো আওয়াজ তুলতে পারি।’
পেহলাওয়ান বলেন, ‘চিন্তায় ছিলাম, কেউ আমার ব্যাপারে তালেবানকে জানিয়ে দিতে পারে। যদি তালেবান আমাকে ধরে নিয়ে যায়, তাহলে আত্মরক্ষার কোনো উপায় ছিল না।’
পেহলাওয়ানের দিনগুলো থাকত কর্মচঞ্চল। সকালে তিনি নিরক্ষর নারীদের পড়াতেন। বিকেলে নিজে পড়াশোনা করতেন। কাজ করতেন একটি রেডিও স্টেশনেও। তবে তাঁর সেই জীবন এখন অনেকটাই বদলে গেছে। গত নভেম্বরে এক দিন প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন পেহলাওয়ান। সেদিন মায়ের সঙ্গে বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে কোনো পুরুষ অভিভাবক ছিল না। হঠাৎ করেই একটি ট্রাক তাঁদের সামনে এসে থামে। বন্দুকধারী এক তালেবান সামনে এসে জানতে চান পুরুষ অভিভাবক ছাড়া তাঁরা কী করছেন? পেহলাওয়ান বলেন, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় মাকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছেন তিনি। বন্দুকধারী সেই তালেবান পেহলাওয়ানের পেশাগত পরিচয় জানতে চাইলে ভয়ে জমে যান তিনি। কারণ তালেবানবিরোধী বিক্ষোভের খবর রেডিওতে শোনাতেন পেহলাওয়ান। মায়ের বুদ্ধিতে সেদিন বেঁচে যান। মা বলেছিলেন, পেহলাওয়ান কিছুই করেন না। তবে তালেবান ওই সদস্য শাসিয়ে যান আর কোনো দিন পুরুষ সদস্য ছাড়া বের হলে বাঁচতে পারবেন না তাঁরা।
ভয় আর আতঙ্কের মধ্যেও দমে যাননি পেহলাওয়ান। ডালিমের জন্য বিখ্যাত কান্দাহার। অক্টোবরে শিয়া মসজিদে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের রক্তের সঙ্গে লাল ডালিমের তুলনা করে কবিতা লিখেছিলেন পেহলাওয়ান। কবিতাটি ছিল এমন:
‘আজ আমরা প্রার্থনা করেছি,
আমরা কান্দাহারের লাল ডালিম
প্রার্থনা শেষ হতে না হতেই
তারা ডালিমগুলো নিয়ে নেয়
ডালিমগুলো ভেঙে ফেলে, ছিঁড়ে ফেলে
কিছু দুমড়েমুচড়ে যায়
লাল রঙে রঞ্জিত হয় কান্দাহার
এই ডালিমগুলোর রং কী একটু বেশি লাল?
ডালিমগুলোর গায়ে একটা চিহ্ন দেখা যায়
ডালিমগুলোতে লেখা আছে ‘শিয়া’
অদ্ভুত সব শব্দ শুনেছেন তিনি
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর গত ছয় মাসে অদ্ভুত সব শব্দ শুনেছেন ৩২ বছর বয়সী কে (নামের আদ্যোক্ষর)। শুনেছেন প্রতিবেশীর ঘরে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ডাকাতির শব্দ। কানে কানে খালাকে বলতে শুনেছেন, অন্ধকারে অনেক মানুষকে তালেবান ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের আর কখনো দেখা যায়নি। চাচাকে বলতে শুনেছেন, বাড়ির বাইরে নর্দমায় বিচ্ছিন্ন করা একটি মাথা দেখা গেছে। পরে শুনেছেন, ওই ব্যক্তি আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের জন্য কাজ করতেন।
ভয়ংকর এসব অভিজ্ঞতার কথা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন এই নারী। গত সেপ্টেম্বরে তিনি বলেন, ‘ভয়ে আমি বাড়ি থেকে বের হতাম না।’ এত বেশি ভয় পাওয়ার কারণও ছিল। কাবুলে তাঁর পরিবারে পুরুষ কোনো সদস্য ছিল না। বাইরে বের হলে তালেবানের রোষানলের শিকার হন কি না, এই ভয় ছিল। কিন্তু ঘরে বন্দী থাকলে তো আর সংসারের প্রয়োজন মেটে না। মুদিখানার জিনিস কিনতে হলে মাকে বলতেন। মা বাইরে গিয়ে সেগুলো নিয়ে আসতেন।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগে এই নারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন। কিন্ডারগার্টেনেও পড়াতেন। কাজের পাশাপাশি জীবনটা উপভোগ করতেন। রাতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে মজা করতেন। জিমে গিয়ে ভার উত্তোলন করতেন। কর্মব্যস্ত, উচ্ছল সেই নারী এখন ঘরবন্দী। হাতে কোনো কাজ নেই। এক সময় কাবুল চষে বেড়ালেও এখন ঘরের বাইরে পা ফেলতে ভয় পান।
অক্টোবরে এই নারী শোনালেন আরেক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার গল্প। সেদিন তিনি প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে দুজনকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেন। তবে তাঁরা আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের জন্য কাজ করতেন না। তাঁরা ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ের।
কর্মজীবী নারীদের স্বাধীনতা কমে গেছে
সেদিনটা ছিল ১৬ আগস্ট। ২৩ বছরের সাজিদার মনে আছে, সেদিনই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শেষ ক্লাস। শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করেই একটি ই–মেইল পান। লেখা ছিল, ‘তালেবান জঙ্গিরা কাবুলে ঢুকে পড়ায় ওই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস বাতিল।’ একজন শিক্ষক ওই ই–মেইলে আরও লিখেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের জন্য যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি তোমাদের সবাইকে নিয়েও উদ্বিগ্ন। তোমরা সবাই নিজেদের খেয়াল রাখবে। আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
এই ই–মেইল পাওয়ার দিনই সাজিদা ডিপ্লোমার সনদ পাওয়ার কথা ছিল। দেশের বাইরে স্নাতকোত্তর করতে চেয়েছিলেন তিনি। আফগানিস্তানের ব্যবসায়িক নির্বাহী হতে চেয়েছিলেন।
সাজিদার স্বপ্নটা বদলে গিয়েছে এখন। তিনি বলেন, ‘এখন আমার স্বপ্ন আফগানিস্তানে প্রাণে বেঁচে থাকা।’
সাজিদা বলেন, বেশির ভাগ সময় এখন তিনি বাড়িতেই কাটান। প্রতিদিন স্কুলফেরত ভাইদের জন্য রাতের খাবার বানান। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্য উন্নয়নবিষয়ক বেসরকারি একটি সংস্থায় এখনো কাজ করেন সাজিদা। গত নভেম্বরে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে গিয়েছিলেন। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হয়নি। সাজিদাকে অফিসে পৌঁছে দেন তাঁর বাবা।
চার নারী এখন যেমন
কবি ও আলোকচিত্রের শিক্ষার্থী পেহলাওয়ানের সময় এখন কাটছে সেলাই করে আর ছাদে টমেটো শুকিয়ে। তবে একেবারে বসেও নেই তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে অর্থ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মী ও শিক্ষক কে (নামের আদ্যক্ষর) এখন সময় কাটান বাগান করে। মায়ের সঙ্গে ঘরবন্দী এই নারীর দৈনন্দিন জীবন একঘেয়েমিতে ভরা। অক্টোবরে এক দিন ফোনে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ঘরে বসে কোনো কাজ নেই। সময় কাটানো কঠিন। মাসহ তিনি রেডিও শুনে ও টিভি দেখে সময় কাটান। তবে টিভিতেও তাঁরা পছন্দের তুর্কি সোপ অপেরা দেখতে পারেন না। তিনি বলেন, আগে আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় গানবাজনা শোনা যেত। কিন্তু সবই এখন বন্ধ।
বেসরকারি সংস্থার কর্মী সাজিদার অনুভূতিও প্রায় একই রকম। সাজিদা বলেন, ‘আমি হারিয়ে গেছি। আমার জীবনের সব লক্ষ্য ও শক্তি শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি কেবল আমার শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার কথা ভাবি।’
আফগানিস্তান ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আলিয়া। আলিয়া বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষে মার্কিন ভিসা পাওয়ার পরে তিনি সান ফ্রান্সিসকোতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বসবাস করছেন।
শীতকালে কাবুলের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সেখানে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। জ্বালানিসংকট দেখা দিয়েছে। পেহলাওয়ান বলেন, তাঁর ও তাঁর পরিবারের সঞ্চয় শেষ হয়ে আসছে। খরচ বাঁচাতে তাঁরা এখন রুটি কম কেনেন। কে (নামের আদ্যক্ষর) বলেন, তিনি জানালা দিয়ে দেখেছেন মানুষ প্লাস্টিক ও পুরোনো জুতা পোড়াচ্ছে। কারণ, তাদের কাছে শীত থেকে বাঁচার জন্য কোনো জ্বালানি নেই। আর এসবের ধোঁয়া থেকে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছে।
সূত্র: প্রথম আলো