শিরোনাম
বৃষ্টির মতো ছোড়া হচ্ছে টিয়ার গ্যাস। ব্যবহার হচ্ছে জলকামান। বাড়ি বাড়ি চালানো হচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। দেখলেই গুলি চালাচ্ছে পুলিশ।
বুটের তলায় পিষছে সেনাবাহিনী। এর পরও থামছে না প্রতিবাদ। দমছে না বিক্ষোভকারীরা। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও নেমে আসছে রাজপথে।
কিন্তু কেন এত বেপরোয়া কাজাখস্তানের মানুষ। কারণ আর কিছুই নয়, সীমাহীন সামাজিক বৈষম্য। অসমতা থেকে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকেই রাস্তায় নামছে দেশটির জনগণ।
ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালাচ্ছে রাজধানী ও অন্যান্য শহরে। দ্য গার্ডিয়ান। রাশিয়া ও চীনের মাঝামাঝি কাজাখস্তানের অবস্থান। দেশটির সঙ্গে সাবেক তিনটি সোভিয়েত রাষ্ট্রের সীমান্ত রয়েছে। ১০টি প্রদেশ। প্রতিটি প্রদেশই ব্রিটেনের চেয়ে বড়।
কিন্তু জনসংখ্যা মাত্র এক কোটি ৯০ লাখ। জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ কাজাখস্তানকে প্রায়ই উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মডেল হিসাবে দেখা হয়। ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর দেশটি কয়েকশ’ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। ২০২০ সালেই দেশটির জিডিপি ছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি ডলার।
বর্তমানে কৌশল ও ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজাখস্তান। দেশটি দক্ষিণ এশিয়াকে রাশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সড়ক, রেল, কাস্পিয়ান সাগরের বন্দরের মাধ্যমে যুক্ত করেছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবেও নিজেকে তুলে ধরেছে। বিশ্বের শীর্ষ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ কাজাখস্তান যা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি। চলমান বিক্ষোভের কারণে ইউরেনিয়ামের দাম ইতোমধ্যে ৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।
বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানি তেলের দামও। বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত এক সপ্তাহেই ক্রুড তথা অপরিশোধিত তেলের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে। আর পরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৮৩ ডলার ছাড়িয়েছে। এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ। ২০২১ সালে আট কোটি ৫৭ লাখ টন তেল উৎপাদন করেছে। এ ছাড়া বিশ্বের দশম কয়লা উৎপাদনকারী দেশও।
আলমাতি কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর আর নূর সুলতান রাজধানী। সর্বাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধায় বিশ্বের যেকোনো উন্নত শহরের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে শহর দুটি। আকাশচুম্বী অট্টালিকা, জাঁকজমক সব শমিংমল, বিলাসবহুল গাড়ি, হোটেল-মোটেল আর দৃষ্টিনন্দন সব ভাস্কর্য। কি নেই এখানে। দেশটির ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণি প্রায়ই শহর দুটিকেই পুরো দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের চিত্র হিসাবে বিশ্বকে দেখানোর চেষ্টা করেন। সাধারণ কাজাখদেরকেও নিরন্তর মরীচিকার মতো হাতছানি দেয়।
কিন্তু আলমাতি আর রাজধানী নূর সুলতানের সীমানা পেরোলেই ঘোর কাটতে শুরু করে। চোখে পড়ে কাজাখস্তানের আসল চিত্র-দারিদ্র্য আর বৈষম্য। যেন আলোর নিচেই অন্ধকার। আর এই দারিদ্র্য আর বৈষম্যই চলতি সপ্তাহের নজিরবিহীন বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মূল কারণ। দেশটিতে সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক গড় বেতন ৪৫০ ডলার বা ৩৬ হাজার টাকারও কম। এই অর্থে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আর তাই পুলিশ, ডাক্তার, শিক্ষক থেকে শুরু করে সরকারের সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীই ঘুষ খায়। রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি। দেশের অর্থনীতি উন্নত বিশাল হলেও সাধারণ জনগণ তার ফল ভোগ করতে পারছে না।
এর ওপর নতুন বছরের প্রথম দিনে তেল ও গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদেই শুরু হয় বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলেও ক্রমেই সেটা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, আয় বৈষম্য ও অর্থনৈতিক দুর্দশার মতো বিষয়গুলো আন্দোলনের কারণ হয়ে ওঠে।
তবে বিক্ষোভ চলছেই। শনিবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সি সাউলে বলেন, কাজাখস্তানকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে পরিণত করেছে। আলমাতি শহরের ভেতরের অস্থায়ী তল্লাশি চৌকির সামনে স্লোগান দিচ্ছিলেন ইয়েরমেক আলিমবায়েভ।
তিনি বলেন, শুধু একটা গোষ্ঠী ভালোভাবে বসবাস করছে আর বাকি সবাই দরিদ্র। রুস্তম নুগমানোভ (৪৮) বলেন, কাজাখরা জেগে উঠেছে। দেশের জন্য তিনি (সাবেক প্রেসিডেন্ট নূর সুলতান নাজারবায়েভ) অনেক করেছেন। তবে আরও অনেক কিছু করতে পারতেন। হয়তো সে সক্ষমতা তার ছিল না। লোভ ও দুর্বলতার কারণে তিনি অনেক কিছু করতে পারেননি।