শিরোনাম
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সাবমেরিন চুক্তির জেরে বিষিয়ে উঠেছিল ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। বহু বছরের মিত্রতা ভুলে তিক্ততার সাগরে ডুবতে বসেছিল দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি। ডেকে পাঠানো হয়েছিল ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকেও। তবে জল বেশি দূর গড়াতে দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এক ফোনেই মান ভেঙেছে ফরাসিদের।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের খবর অনুসারে, বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে ফোন করেছিলেন বাইডেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কথা হয়েছে তাদের।
ম্যাক্রোঁকে বাইডেন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সাবমেরিন চুক্তি করার আগে তাদের ফ্রান্সের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। এবার ভুল হলেও ভবিষ্যতে তা অবশ্যই করা হবে। বাইডেনের এই ‘সরল স্বীকারোক্তি’তেই বরফ গলেছে প্যারিসের।
বাইডেনের সঙ্গে কথা বলার পর ম্যাক্রোঁ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূতকে আবার ফেরত পাঠানো হবে। আগামী সপ্তাহেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সেখানে পৌঁছে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন ফরাসি দূত।
তবে চুক্তি করার আগে আরও আলোচনা দরকার ছিল মানলেও বাইডেন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি মূলত প্রক্রিয়াগত ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। আগে পরামর্শ করা উচিত ছিল তা বলেছেন এবং ভবিষ্যতে পরামর্শ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনালাপে এটিই ছিল বাইডেনের কৌশল। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিটি অটুট থাকছে।
ফোনে কথা বলার পর আগামী অক্টোবরে মুখোমুখি বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টরা। বৈঠকটি হবে ইউরোপে। সেখানে সাবমেরিন-বিতর্কের পর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদারের চেষ্টা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে নতুন এক জোট গড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিন দেশের সরকারপ্রধান যৌথভাবে এ জোটের ঘোষণা দেন। চুক্তি অনুসারে, অস্ট্রেলিয়াকে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈরিতে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ফ্রান্স।
২০১৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ডিজেলচালিত সাবমেরিন কিনতে কয়েকশ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সেই চুক্তি বাদ দিয়ে পারমাণবিক শক্তিচালিত অত্যাধুনিক সাবমেরিন তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে অজি সরকার। এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তায় দ্রুত পরিবর্তন’ আসার কারণে প্রচলিত সাবমেরিনগুলো চাহিদার ‘অনুপযুক্ত’ হয়ে পড়েছে।
এতেই ক্ষেপেছে ফ্রান্স। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লে দ্রিয়াঁ এটিকে সরাসরি ‘পিঠে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়েছিলাম, সেটি ভাঙা হয়েছে।
তবে ফ্রান্সের মূল ক্ষোভটা গিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। এভাবে ‘একতরফা’ চুক্তি করায় বাইডেনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিল খুঁজে পেয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ফ্রান্সইনফো রেডিওকে বলেছেন, (বাইডেনের) এই নৃশংস, একতরফা ও অনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত অনেকটা ট্রাম্প যা করতেন, আমাকে সেটিই মনে করিয়ে দিচ্ছে। মিত্রদের সঙ্গে এমনটি করতে হয় না।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায় ফ্রান্স। কথা ছিল, চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক হবে। কিন্তু ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুরোধে সেই বৈঠকও বাতিল করা হয়।
এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই কথা বলতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন ফরাসি সরকারের এক মুখপাত্র।