চীনে করোনার রিপোর্ট করলেই গুম

ফানাম নিউজ
  ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৪৯

কখনো আটক করা হচ্ছে। কখনো গুম করে ফেলা হচ্ছে। কখনো আবার বিচার না করেই মাসের পর মাস বন্দি করে রাখা হচ্ছে।

চীনে করোনাভাইরাস নিয়ে রিপোর্ট করায় এভাবেই চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সরকার।

প্রশাসনের নির্দেশেই সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। খবর সিএনএন। ২০১৮ সালে ‘টারমিনাস ২০৪৯’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেন সাংবাদিক মেই, তার সহকর্মী কাই ওয়ে ও আরেক অংশীদার ট্যাং।

এখানে নারী যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন মি টু ও অভিবাসী অধিকারের মতো বিভিন্ন ইস্যুতে খবর প্রকাশ করতেন।

কিন্তু এসব খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলেই বেশির ভাগ খবরই রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী তকমা দিয়ে মুছে দেওয়া হতো।

এর পরও তারা এসব খবর বারবার প্রকাশ করতেন। ২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনা মহামারি নিয়ে বিভিন্ন খবর প্রকাশ করতে শুরু করেন তারা।

কিন্তু কিছু দিন পরই সাংবাদিক মেইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি তার পরিবারকে জানান মেই’র বস কাই ওয়ে।

মেই’র ভাই চেন কুন বলেন, খবরটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার সন্দেহ হয়, ওয়েবসাইটে করোনা নিয়ে রিপোর্ট করার কারণেই তাকে আটক করা হয়েছে।

এরপর মেই’র বস কাই ওয়ে ও ট্যাংকেও নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর মাত্র ১০০ মিনিটের বিচারে তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ট্যাংকে মে মাসেই ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ১৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করে আগস্টে বের হন মেই ও কাই ওয়ে।

চীনের উহানে করোনাভাইরাস নিয়ে রিপোর্ট করেন নারী সাংবাদিক ঝাং ঝান। অন্য যেসব নিরপেক্ষ সাংবাদিককে চীনে আটক রাখা হয়েছে ঝাং সেসব নিয়েও রিপোর্ট করেন। রিপোর্ট করেন ভুক্তভোগীদের পরিবারকে হয়রানি করা নিয়েও। কিন্তু ২০২০ সালের ১৪ মে হঠাৎই উহান থেকে নিখোঁজ হন ঝাং।

এর এক দিন পর কমপক্ষে ৪০০ মাইল দূরের শহর সাংহাইয়ের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে বলে জানানো হয়। ১৯ জুন তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয় সাংহাইয়ে। এর তিন মাস পর ৯ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় তার আইনজীবীকে।

‘অকারণে বিবাদ ও অশান্তি সৃষ্টির’ দায়ে ডিসেম্বর মাসে ঝাংকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ঝাং একাধিকবার অনশনও করেন।

অভিযোগ রয়েছে-কারাগারে তাকে পেটের ভেতর নল ঢুকিয়ে জোর করে খাওয়ানো হয়। ওই নল যাতে তিনি বের করতে না পারেন, সেজন্য তার হাত-পা সবসময় বেঁধে রাখা হয়।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ৩৮ বছর বয়সি নারী সাংবাদিক ঝাং ঝান আগে ছিলেন আইনজীবী। আইনের পেশা ছেড়ে তিনি সাংবাদিকতার জগতে আসেন। ঝাং এখন সারা বিশ্বেই এক পরিচিত নাম।

গত বছরের মে মাস থেকে দেশটির কারাগারে আটক ঝাং গত বছর রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) কর্তৃক সাহসী সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ‘প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড’ পান।

শুধু মেই কিংবা কাই ওয়ে বা ঝাং ঝানই নন, করোনা নিয়ে রিপোর্ট করায় শত শত সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। আরএসএফ’র ডিসেম্বরের এক রিপোর্ট মতে, এই মুহূর্তে ১২৮ জন সাংবাদিক হয় কারাগারে বন্দি না হয় নিখোঁজ আছেন। এ ছাড়া করোনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় অন্তত ৭০ উইঘুর সাংবাদিক ও আরও ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

৩ জন আক্রান্ত, লকডাউনে ১০ লাখ : চীনের একটি শহরে তিনজনের শরীরে লক্ষণবিহীন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপর ওই শহরের অন্তত ১০ লাখ মানুষকে লকডউনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে তাদের ঘরের বাইরে বের হতে বারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে পুরোপুরি লকডাউন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রথম করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হওয়ার পর থেকেই চীন ‘জিরো কোভিড’ নীতি গ্রহণ করে। সীমান্তে কড়াকড়ি কঠোর করে। টার্গেটেড লকডাউন দেয়। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় তাদের সেই নীতি এখন চাপের মুখে। ওদিকে শীতকালীন অলিম্পিকের আর মাত্র এক মাস বাকি আছে। এএফপি।

লকডাউনে স্মার্টফোন সিগারেটের বদলে খাবার

টানা ১৩ দিন লকডাউনে বন্দি চীনের জিয়ান শহরের বাসিন্দারা। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। সরকারি সাহায্য বাড়িবাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা থাকলেও অনেকের অভিযোগ-পাননি। বাধ্য হয়েই তারা পারিবারিক দৈনন্দিন ব্যবহার্য আসবাবপত্র বিনিময় করে সংগ্রহ করছেন খাবার। স্মার্টফোন, ট্যাব, সিগারেট, বাঁধাকপি, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী রয়েছে এই বিনিময়পণ্যগুলোর মধ্যে।

মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ২৩ ডিসেম্বর থেকে লকডাউন চলছে মধ্য চীনের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শাআনশি প্রদেশের রাজধানী জিয়ানে।

প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস এই শহরে। টানা লকডাউনে খাদ্য জোগাড় করতে দিশেহারা শহরটির বাসিন্দারা। খাদ্য ঘাটতিতে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই তারা ফিরে গেছেন আদিযুগের বিনিময় প্রথায়। সাম্প্রতিক সময়ে এমন বেশ কিছু ছবি ও তথ্য উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সেই ছবিগুলো বলছে, বাঁধাকপির জন্য সিগারেট, আপেলের জন্য থালা, ধোয়ার তরল সবজির ছোট পোঁটলার জন্য স্যানিটারি প্যাড বিনিময় করছেন অসহায় বাসিন্দারা। স্থানীয় একটি নিউজ আউটলেট জানিয়েছে, ‘লোকজন তাদের ভবনে থাকা লোকজনের সঙ্গেই বিভিন্ন জিনিস অদলবদল করছেন।’

ওয়াং নামের এক বাসিন্দা রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেছেন, অন্য এক বাসিন্দা চালের জন্য তার স্মার্টফোন এবং ট্যাব দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। অন্য একজন জানিয়েছেন, ‘অসহায় নাগরিকরা বিনিময়ের যুগে পৌঁছেছে। তিনি নিজেই আদিমসমাজে প্রত্যাবর্তন করেছেন প্রয়োজনে বের হতে না পারায়।