২০২২ সাল ঘিরে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ইন্দোনেশীয়রা

ফানাম নিউজ
  ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১২:২৫

করোনার ডামাডোলে বিশ্ববাসীর কেটে গেলো আরও একটি বছর। নানা নাটকীয়তা আর ঘটনাবহুল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে ২০২১ সাল। কিন্তু ২০২২ সালে এসেও করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছে না বিশ্বের মানুষ। করোনার কবলে পড়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি চাঙা হতে এখনো বাকি। দেশ ও অঞ্চলভেদে পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও শক্ত মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা সবার। আর সেই আশা জাগানিয়া সময় হচ্ছে ২০২২ সাল।

জনপ্রিয় জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবছরই মানুষের আশা-নিরাশা, সুখ-সারির বিষয়গুলো নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে। এবারও ২০২২ সালকে নিয়ে তারা জরিপ করেছে। আর এতে উঠে এসেছে বিশ্বের মানুষের আশা-নিরাশার নানা চিত্র।

গ্যালাপের জরিপের তথ্য-উপাত্ত বলছে, বিশ্বের ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন ২০২২ সাল বিদায়ী বছরের চেয়ে ভালো কাটবে। তবে ২৮ শতাংশ মানুষ আরও খারাপ একটি বছরের আশঙ্কা করেছেন।

এবার গ্যালাপের জরিপে অংশ নিয়েছেন ৪৪টি দেশের মানুষ। তাদের মধ্যে ২০২২ সালকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ইন্দোনেশিয়ার মানুষ। দেশটির ৭৬ শতাংশ নাগরিকই ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সাল ভালো কাটবে বলে আশা করছেন।
এই তালিকায় প্রথম পাঁচে ইন্দোনেশিয়ার পরে আলবেনিয়ার ৭০ শতাংশ, এরপর নাইজেরিয়ার ৬৮ শতাংশ, আজারবাইজানের ৬২ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ৫৯ শতাংশ মানুষ একই মত পোষণ করেন।

তবে ২০২২ সালকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি হতাশ আফগানরা। দেশটির ৫৬ শতাংশ মানুষই আরও একটি খারাপ বছরের আশঙ্কা করছেন। এরপর তালিকায় রয়েছেন তুরস্কের ৫৬ শতাংশ, বুলগেরিয়ার ৪৮শতাংশ, পোল্যান্ডের ৪৭ শতাংশ, চেক রিপাবলিকের ৪৫ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ৪১ শতাংশ মানুষ। এসব মানুষ ২০২২ সালকে নিয়ে নিরাশা ব্যক্ত করেছেন।

রিপাবলিক অব কোরিয়ার ৫৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন ২০২২ সালটিও একই রকম কাটবে। একই মনোভাব পোষণ করেছেন ইতালির ৪৮ শতাংশ, সার্বিয়ার ৪২ শতাংশ মানুষ।

গ্যালাপের আশা সূচক বলছে, ইন্দোনেশিয়ানদের মধ্যে ৭২ শতাংশই বিশ্বের সবচেয়ে আশাবাদী মানুষ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। তার পরে আলবেনিয়ার ৬৫ শতাংশ, আজারবাইজানের ৫৩ শতাংশ, নাইজেরিয়ার ৫১ শতাংশ, মেক্সিকোর ৪৭ শতাংশ ও ভিয়েতনামের ৪৭ শতাংশ মানুষও আশাবাদী।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি হতাশাগ্রস্ত তুরস্কের ৩৪ শতাংশ মানুষ। এরপর বুলগেরিয়ার ৩৪ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৩২ শতাংশ, পোল্যান্ডের ৩০ শতাংশ ও চেক রিপাবলিকের ২৫ শতাংশ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

ইউরোপ, রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য আরও হতাশাবাদী, যেখানে এশিয়ার দেশগুলো উদাহরণস্বরূপ, আরও আশাবাদী বলে মনে হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, জার্মানিতে, যুক্তরাজ্যে, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতে আশাবাদ গত বছরের সমীক্ষার তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে যখন জাপান, মেক্সিকো এবং কোরিয়ায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুরস্ক হতাশাবাদের রেকর্ড বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে গুরুতর মুদ্রাস্ফীতি।

অর্থনীতি নিয়ে জরিপের তথ্য-উপাত্ত উদ্বেগজনক। বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষ মনে করে তাদের দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। ৪১ শতাংশ অর্থনীতির কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আবার ২৬ শতাংশ মানুষের ভাবনা ২০২১ সালের মতোই অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকবে।

অর্থনীতি নিয়ে নাইজেরিয়ার ৬১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৫৮ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৫৫ শতাংশ এবং আজারবাইজানের ৫২ শতাংশমানুষ আশাবাদী। তুরস্কের ৭২ শতাংশ, বসনিয়া ও হার্জেগোভানিয়ার ৭২ শতাংশ বুলগেরিয়ার ৬৪ শতাংশ, পোল্যান্ডের ৬৪ শতাংশ, রোমানিয়ার ৬১ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৬০ শতাংশ ও জার্মানির ৫৯ শতাংশ মানুষ অর্থনীতির কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার করতে হতে পারে বলে মত দিয়েছেন।

মহামারি এবং অর্থনৈতিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত সুখ রয়েছে জরিপ ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ মানুষ নিজেদের খুব সুখী বলে মনে করেন, দশমাংশের বেশি বলেন যে তারা কম বা বেশি অসুখী, যেখানে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বলেন যে তারা সুখীও নয়, অসুখীও নয়।

কলম্বিয়ার ৮৩ শতাংশ মানুষ নিজেদের সুখী বলে মনে করেন। এরপর রয়েছে কাজাকিস্তান ৮১ শতাংশ, আলবেনিয়া ৭৪ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৭৮ শতাংশ এবং নাইজেরিয়া ৭৮ শতাংশ মানুষ। সবচেয়ে বেশি অসুখী আফগানিস্তানের মানুষ। দেশটির ৩৬ শতাংশ মানুষ অসুখী। এরপর রয়েছে ঘানা ও ইরাকের ৩১ শতাংশ, ইউক্রেনের ৩১, তুরস্কের ২৩, পাকিস্তানের ২৩ এবং রাশিয়ার ২৩ শতাংশ মানুষ।

ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং পূর্ব এশিয়া বিশ্বের সুখী স্থানগুলোর তালিকায় রয়েছে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং রাশিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো একই মানদণ্ডে থাকে।

এ জরিপ নিয়ে ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকারে গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট কানচো স্টয়চেভ বলেন, বিশ্বজুড়ে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে গ্যালাপ মানুষের ব্যক্তিগত অভিব্যাক্তি বা পছন্দ-অপছন্দ জানার চেষ্টা করে না, বরং জনগণের ভাবনা তুলে আনার চেষ্টা করে। তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু একটা বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারি আর তা হলো আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ জানতে পারি না, যদিও আমরা অনেক সময় মনে করি যে আমরা সেটা পারি। ২০২১ সাল যে সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে এবারেে জরিপওে তার ছাপ পড়েছে বলে মনে করেন তিনি। বিশ্বের বৃহত্তম জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল ১৯৭৯ সাল থেকে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।