শিরোনাম
নতুন বছরে পা রাখার আগেই আরও তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করছে জার্মানি। বাকি তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২২ সালের শেষের দিকে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে। জলবায়ু সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
২০১১ সালে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরই জার্মান সরকার নিজেদের পারমাণবিক বিদ্যুৎনির্ভরতা শূন্যে নামাতে উদ্যোগী হয়।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তথ্যমতে, জার্মানিতে বর্তমানে ছয়টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সেগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে মোট ২৬টি পারমাণবিক বিদ্যুৎচুল্লি বন্ধ হচ্ছে, একটি বন্ধের পরবর্তী অবস্থায় রয়েছে এবং তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এরই মধ্যে পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। অবশিষ্ট চুল্লিগুলো ২০২২ সালের শেষ নাগাদ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) ব্রোকডর্ফ, গ্রোহেন্ডে এবং গুন্ড্রেমিংগেন সি চুল্লি বন্ধ করছে জার্মানি। ই.অন এবং আরডব্লিউই পরিচালিত এ তিনটি চুল্লিতে প্রায় তিন দশক বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে দেশটি। অবশিষ্ট ইসার ২, এমসল্যান্ড এবং নেকারওয়েস্টেইম ২ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগামী বছরের শেষের দিকে বন্ধ করা হবে।
জার্মান এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বিডিইডব্লিউ’র প্রধান কার্স্টিন আন্দ্রেই বলেছেন, জার্মানির পারমাণবিক বিদ্যুৎশূন্য হওয়া চূড়ান্ত।
বিডিইডব্লিউ’র তথ্যমতে, ২০২১ সালে জার্মানির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছয়টি পারমাণবিক চুল্লির অবদান ছিল ১২ শতাংশের মতো। বিপরীতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎশক্তি প্রায় ৪১ শতাংশ, কয়লাবিদ্যুৎ ২৮ শতাংশের মতো এবং গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ।
জার্মান সরকারের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ৮০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। বায়ু এবং সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় তারা।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো জার্মান সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে চুল্লি বন্ধ করলেও ২০২২ সালেই দেশটিতে পারমাণবিক যুগের অবসান হবে না জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করায় অনেকে চাকরি হারাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে গুন্ড্রেমিংগেনের মেয়র টোবিয়াস বুয়েলার বলেছেন, সেখানকার কর্মীরা চুল্লি ভাঙার কাজেই ব্যস্ত থাকবেন। তার মতে, এসব চুল্লি ভাঙতে আরও এক থেকে দুই দশক লেগে যেতে পারে।
ই.অনের হিসাবে, একেকটি পারমাণবিক চুল্লি ভাঙতে ১১০ কোটি ইউরো (১২৫ কোটি মার্কিন ডলার) খরচ হতে পারে। ভাঙার কাজ পুরোপুরি শেষ হতে ২০৪০ সাল লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।