আয়ের বিকল্প উৎসের সন্ধানে পর্যটননির্ভর বালির তরুণরা

ফানাম নিউজ
  ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০০

করোনা কেড়ে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের পর্যটকদের কোলাহল মুখর পরিবেশ। ভেঙে পড়েছে দেশটির পর্যটননির্ভর অর্থনীতি। তলানিতে ঠেকেছে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িতদের আর্থিক অবস্থা। তাই বিকল্প না ভেবে উপায় নেই বালির একঝাঁক তরুণের। টেকসই আর্থিক ভবিষ্যৎ গড়তে বিকল্প ভাবা শুরু করেছেন তারা।

বালির তরুণ উদ্যোক্তা ম্যাড ইয়োগানতারা করোনা মহামারিকালে চাকরি হারিয়েছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানি থেকে। ম্যাড একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। কিন্তু চাকরি হারালেও তার পরিবারের জন্য তাকে বিকল্প পথ ভাবতে হয়। তিনি তার কৃষিবিষয়ক প্রভাষক চাচার সহায়তায় পরিবারের একটি খালি জায়গায় চাষাবাদ করার সুযোগ পান। সেটি এখন ছোট্ট কৃষি খামারে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই বছর পর ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ এখন জৈব পদ্ধতিতে ফল এবং শাক-সবজি অনলাইনে বিক্রি করে আয় করছেন।

তিনি জানান, তার এখন ২৫ বর্গমিটারের পার্মাকালচারের (কৃষিতে বিভিন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘বায়োজিওকেমিক্যাল' বৃত্ত সৃষ্টি করা, যেগুলো তাদের পরিবেশকে নিজের মতো করে গড়ে নেয় ও তা থেকে বাঁচতে পারে) বাগান রয়েছে। ম্যাড বলেন ‘আমি করোনা মহামারির মধ্যে ভেজালমুক্ত শাক-সবজি উৎপাদন করেছি এবং সহায়তাও দিয়েছি মানুষকে।’

মহামারির আগে ম্যাড কখনো আতিথেয়তার বাইরে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবেননি। তার মতো অন্য তরুণদের মধ্যেও তিনি সম্ভাবনা দেখছেন। ম্যাড বলেন, বালির তরুণদের এখনই নিজেকে প্রকাশ করা দরকার। আমাদের এখনকার অভিজ্ঞতা এমন যে, পর্যটনের ওপর বেশি নির্ভর হতে পারছি না।

ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বালির পর্যটনখাতে কাজ করতেন দুই লাখ ৩৬ হাজার মানুষ। এর আগের বছর কাজ করতেন তিন লাখ ২৮ হাজার। ২০২১ সালে আবার পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে গত অক্টোবরে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর। তবে এবছর প্রথম ১০ মাসে মাত্র ৪৫ জন পর্যটককে স্বাগত জানাতে পেরেছে বালি, যেখানে ২০১৯ সালে পর্যটক সংখ্যা ছিল ৬০ লাখের বেশি, বলছে বালির সেন্ট্রাল পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রতিসারা বুমি ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইরমা সিতোমপুল, দ্বীপের যুবকদের জন্য ইনকুরি নামে একটি সংগঠন চালু করেছেন। তিনি বলেন, এই বিপর্যয় তরুণদের বিকল্প কিছু ভাবতে শিখিয়েছে।

ইরমা বলেন, বিশেষ করে বালিতে আমরা দেখেছি কীভাবে তরুণরা সংগ্রাম করেছে। যেখানে বেশিরভাগের আয় পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। এই খাতের কঠিন পরিস্থিতিতে তারা অনেকেই বেকার হয়ে যান এবং জীবনযাপনের জন্য বিকল্প কিছুও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তারা এখন অন্যকিছু ভাবতে শুরু করেছেন, কারণ তারা দেখেছেন কীভাবে বালির পর্যটনখাত ধসে পড়েছে।

ইরমার গড়া সংগঠনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য তরুণ ব্যবসায়ীদের সবধরনের সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারি এটাও তরুণদের শিখিয়েছে কীভাবে বাড়িতে থেকেই ছোট ব্যবসা শুরু করা যায়।

তিনি জানান, আমাদের সংগঠনের শুরু থেকে ২৭৬ জন রয়েছে, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩২ বছর। এদের মধ্যে ৪৫ শতাংশই স্কুলগামী।

১৯৭১ সালে ইন্দোনেশিয়ার সরকার বালিকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আতিথেয়তার প্রশিক্ষণের জন্য বহু প্রতিষ্ঠানও তৈরি করে। সেই উদ্দেশ্য সফলও হয়। ১৯৯৪ সালে যেখানে পর্যটক সংখ্যা ছিল ১০ লাখ সেখানে ২০১৯ সালে এসে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ লাখে।

এরপর দেশটি নজর দেয় পর্যটকদের জন্য হোটেল ও বাড়ি নির্মাণের দিকে। অনেকে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসাও শুরু করে দেন সে কারণে। দেশটির মানুষজনও তাদের আয়ের পথ এই পর্যটনের ওপরই খুঁজতে থাকে। কয়েক প্রজন্ম পর্যটন সম্পর্কিত পেশাকেই মূল পেশা ভাবতে শুরু করে। তারাও তাদের সন্তানদের একই পেশায় অন্তর্ভুক্ত করতে চান। সামাজিক প্রত্যাশাগুলোও তৈরি হয় এই পর্যটননির্ভর আয়ের ওপর ভিত্তি করেই।

কিন্তু বালির রয়েছে শক্তিশালী কৃষি সংস্কৃতি। সে কারণে এগ্রি-বিজনেসের অপার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে। তরুণরা বলছিলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ভালো কিছু করতে পারবো।

ইরমাও মনে করেন তরুণদের হাত ধরেই আসবে পরিবর্তন। তারাই ভবিষ্যতের কাঠামো দাঁড় করাতে পারবে। অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা অর্জন করাই এখন বালির তরুণদের লক্ষ্য।

সূত্র: আল-জাজিরা