দ. এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে সন্ত্রাস নিয়ে কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র?

ফানাম নিউজ
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৪২

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি বছর ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম’ নামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় তিন যুগ ধরে এই কাজ করে আসছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরিজম-২০২০’। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে। তবে একই সময়ে সন্ত্রাস-সম্পর্কিত তদন্ত ও গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে তিনটি নির্দিষ্ট সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেও তাতে কারও মৃত্যু হয়নি।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর সন্ত্রাস পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে। এতে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার পরিবর্তনশীল মিশ্রণ দেখা গেছে। বছরটিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যেমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত ছিল, তেমনি ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পাশাপাশি মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার পরিবর্তন দেখা গেছে।


আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে আইএসের শাখা আইএসআইএস-কে’র আক্রমণাত্মক ও সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত ছিল। হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ আফগান তালেবান আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ব্যাপক বিদ্রোহী হামলা চালিয়ে গেছে। তালেবান সরকারি কর্মকর্তাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। ২০২০ সালে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ও তালেবান পৃথকভাবে আইএসআইএস’কের পুনরুত্থান ঠেকাতে কাজ করেছে। এরপরও গোষ্ঠীটি পুনর্গঠিত হয়ে ও সক্ষমতা অর্জন করে আফগানিস্তানের সরকারি-বেসরকারি হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালায়।

পাকিস্তান
২০২০ সালে পাকিস্তানেও সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত ছিল। বছরজুড়ে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), আইএসআইএস-কে এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির মতো অভ্যন্তরীণ হামলাকারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটি ২০২০ সালে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ এবং ভারতকেন্দ্রিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছে। লস্কর ই-তৈয়্যেবার (এলইটি) প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাইদ এবং এলইটির অন্য চার জ্যেষ্ঠ নেতাকে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন সংক্রান্ত একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

তবে আঞ্চলিকভাবে পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছিল। ২০২০ সালেও পাকিস্তান থেকে আফগান তালেবান ও তাদের সহযোগী হাক্কানি নেটওয়ার্ক আফগানিস্তানে এবং এলইটি, জেইএমের মতো গোষ্ঠীগুলো ভারতে হামলা চালিয়ে গেছে। এছাড়া, জেইএমের প্রতিষ্ঠাতা জাতিসংঘের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাসুদ আজহার এবং ২০০৮ মুম্বাই হামলার ‘প্রজেক্ট ম্যানেজার’ সাজিদ মীরের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দেশটি। তারা দুজনেই পাকিস্তানে মুক্ত অবস্থায় ঘুরছেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

অবশ্য আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ইতিবাচক ভূমিকাও রেখেছে পাকিস্তান। তারা তালেবানকে সন্ত্রাস থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ২০২০ সালজুড়ে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) কর্মপরিকল্পনা এগিয়ে নিলেও বছর শেষে পাকিস্তান এফএটিএফের ধূসর তালিকাতেই ছিল।

ভারত
২০২০ সালে ভারত সরকারের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব তৈরি অব্যাহত রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছর সেপ্টেম্বরে দুই দেশের মধ্যে ১৭তম কাউন্টার টেরোরিজম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং থার্ড ডেজিগনেশন ডায়লগ হয়। অক্টোবরে হয়েছিল তৃতীয়বারের মতো দুই-দুই মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ।


২০২০ সালে ভারতের সন্ত্রাস দমন বাহিনী কেন্দ্রীয় থেকে রাজ্য পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শনাক্ত এবং প্রতিরোধ করেছে। দেশটির ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) আইএস-সম্পর্কিত ৩৪টি মামলার তদন্ত করে এবং সেপ্টেম্বরে কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে সন্দেহভাজন ১০ আল-কায়েদা সদস্যসহ ১৬০ জনকে গ্রেফতার করে।

শ্রীলঙ্কা
আইএস মতাদর্শে অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ইস্টার সানডেতে আত্মঘাতী হামলা হয় শ্রীলঙ্কায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি ২০২০ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে নিজেদের সন্ত্রাস প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। যদিও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কিছু সহযোগিতামূলক উদ্যোগের অগ্রগতি থমকে গেছে।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ ইস্টার হামলার চলমান তদন্তে এফবিআই’কে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছিল। এ ঘটনায় শতাধিক সন্দেহভাজন হেফাজতে ছিল।

মালদ্বীপ
২০২০ সালজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে মালদ্বীপ। হিংসাত্মক চরমপন্থা মোকাবিলায় অগ্নিসংযোগ, ছুরিকাঘাতসহ অন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারে নজর দিয়েছে দেশটির সরকার।

নেপাল
২০২০ সালে নেপালে তেমন কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেনি। তবে রাজনৈতিক অনুপ্রাণিত অনেক ছোট ছোট সহিংসতা দেখা গেছে। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্যবস্তু ছিল বড় বড় অবকাঠামো, সরকারি অফিস, রাজনৈতিক দল বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলো। নেপাল সরকার বেশিরভাগ হামলার জন্য দেশটির কমিউনিস্ট পার্টিকে দায়ী করে। বিপ্লব নামে পরিচিত এই দলটির বিরুদ্ধে ২০২০ সালে আনুমানিক ২১টি অগ্নিসংযোগ, ১৩টি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সেপ্লোসিভ ডিভাইস), তিনটি ভুয়া আইইডি, দুটি অপহরণ, চারটি শারীরিক আক্রমণ এবং একটি নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাসবিষয়ক এই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ ভুটানের নাম পাওয়া যায়নি।