শিরোনাম
পৌর ও নগর সংস্থার ভোট শেষ হওয়ার পর অনেকেরই মনে হয়েছিল ত্রিপুরা নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখাতে চাচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেস। বিশেষ করে নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর গত ১৫ দিনে ত্রিপুরায় তৃণমূলের কোনো নেতাকে আসতে না দেখে অনেকেই এমনটি মনে করেছিলেন।
তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন বছরে ত্রিপুরায় লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে আসছে তৃণমূল। তারা আগামী বছরের শুরুতে ‘বিজেপি হটাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
ত্রিপুরায় তৃণমূলের কর্মসূচি ঠিক করতে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) রাজ্যে আসেন বঙ্গ তৃণমূলের নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ত্রিপুরায় পৌঁছে প্রদেশ তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকের বাড়িতে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে লাগাতার কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যতদিন ত্রিপুরা থেকে শাসক বিজেপিকে হটানো না যাবে ততদিন আন্দোলন কর্মসূচি চলবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে বঙ্গের এক ঝাঁক নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবে বলে জানান তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শাসকদল বিজেপির নেতৃত্বে ত্রিপুরায় যে ধরনের নৈরাজ্য চলছে তা এক কথায় অভাবনীয়। অগণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে মানুষ কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ থাকতে পারে না। ত্রিপুরার ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে। এখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি হয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে এমন হচ্ছে। বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়।
তৃণমূল এই নেতা বলেন, যারা (তৃণমূল) ১ শতাংশ ভোট পাবে না বলে এতদিন প্রচার করা হয়েছে, তারা ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে তাদের জানান দিয়েছে। বিষয়টি শাসক বিজেপি আগে থেকেই জানতো। আর এজন্য নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে কোনো মিছিল-মিটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষেত্রে অনুমতি দিলেও পরে তা বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ২০ ডিসেম্বর তৃণমূলের পক্ষ থেকে ত্রিপুরার বিভিন্ন মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে গিয়ে মহকুমা শাসকদের কাছে ডেপুটেশন প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে একযোগে এই ডেপুটেশন দেবে। মূলত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতের মাশুল বাড়ানো, মানুষের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে এ ডেপুটেশনে। এরই মধ্যে নেতাদের মধ্যে দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ৫ জানুয়ারি ১৫ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজভবন অভিযান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, তৃণমূল যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা করে দেখায়। নির্বাচনের আগে বিজেপি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসছে, সেসব প্রতিশ্রুতির সিকিভাগও পূরণ করেনি। রাজ্যে উন্নয়নের ছিটেফোটাও পৌঁছায়নি তা ত্রিপুরার ‘মাই গভর্নমেন্ট অ্যাপ’ থেকেই স্পষ্ট। বিজেপির ভাঁওতাবাজি এর আগেও উত্তরপ্রদেশ, ছত্রিশগড়ে দেখা গেছে।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক পীযূষ কান্তি দেবরায়সহ আরও বেশ কয়েকজন বামপন্থী নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়সহ প্রদেশ তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক দলীয় পতাকা হাতে তাদের বরণ করে নেন।
পরে প্রদেশ নেতা সুবল ভৌমিক বলেন, মানুষ এখন মা-মাটি-মানুষের সরকারের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। এজন্য ছাপ্পা ভোটের রাজনীতি করেও তৃণমূলকে আটকানো যাচ্ছে না। ভোটের ফলাফলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ রাজ্যের রাজ্যপাল বরাবরের মতো নিশ্চুপ রয়েছেন। এজন্য তাকে জাগাতে আগামী ৫ জানুয়ারি রাজভবন যাচ্ছি আমরা।’