মিয়ানমারের অভ্যুত্থানে মাদকের বিস্তার বেড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়

ফানাম নিউজ
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:৩৮
আপডেট  : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:৩৯

বর্তমান বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম মাদক। ভয়াবহ মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। দেশে দেশে বিভিন্ন কারণে মাদককারবারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে।

সম্প্রতি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেখানে মাদকের উৎপাদন বেড়েছে। যা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর ছিল লাওস পুলিশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ সময় পুলিশের এক কর্মকর্তা লাও ব্রিউয়ারি বিয়ার ক্রেট (এক ধরনের মাদক) ভর্তি একটি ট্রাক আটক করে। ওই ট্রাকের মধ্যে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ মেথামফেটামিন বড়ি ও ১ দশমিক ৫ টন ক্রিস্টাল পাওয়া যায়। এগুলো মাদকের নতুন সংস্করণ। এ ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ আগে দেশটির পুলিশ একই এলাকা থেকে দুটি অভিযান চালিয়ে এক কোটি ৬০ লাখ এমফিটামিন ট্যাবলেট জব্দ করে।

জাতিসংঘের অপরাধ ও মাদক সংস্থার কর্মকর্তা জেরেমি ডগলাস বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এরই মধ্যে মাদক জব্দে রেকর্ড ভাঙতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মেথ নামক মাদক জব্দ হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলে মাদক বিস্তারের অন্যতম কারণ হলো কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি পরায়ণতা। তাছাড়া মাদককারবারীদের নির্মূলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাছে যথেষ্ট সরঞ্জামও নেই। এসব অঞ্চলে বিশাল মাদকের সামান্য অংশই ধরা পড়ে বলেও জানান তিনি।

অধিকাংশ মাদক জব্দের ঘটনা ঘটে ইন্দোচীনে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ এই এলাকায় বাস করেন। মেথের তিন-চতুর্থাংশের সন্ধান পাওয়া যায় এখানে। মেথ ল্যাবগুলো পূর্ব মিয়ানমারের শান রাজ্যে পাওয়া যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের আগেও এখানে মেথ উৎপাদনের বড় কেন্দ্র ছিল। বর্তমানে যথাযথ নজরদারির অভাবে মাদককারবারীদের কাছে ওই এলাকা লোভনীয় হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালের তুলনায় লাওসে এ বছর ছয়গুণ বেশি মেথ জব্দ হয়েছে। যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড।

ডগলাস বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের ফলে মাদক উৎপাদনের এলাকাগুলোতে নজরদারি নেই।

২০১৯ সালে আনডক নাম্বারসের তথ্যানুযায়ী, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ মেথসহ অ্যামফিটামিন জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে। বিশ্বব্যাপী গড়ে এর সংখ্যা শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর মানে হলো এক কোটি লোক মেথ ব্যবহার করে। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের প্রতিটিতে অন্তত ১০ লাখ মানুষ মেথ ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। ধারাবাহিকভাবে দেশগুলোতে ক্রমেই এই মাদক গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৯ সালে মেথের আঞ্চলিক বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার কোটি ডলারে।

ইন্টারন্যাশনাল ড্রাগ পলিসি কনসোর্টিয়ামের অ্যান ফোর্ডহ্যাম জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার এ ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মাদক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার সাধারণত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে অথবা জোরপূর্বক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। যা মোটেই কার্যকর ব্যবস্থা নয়।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, মাদকাসক্তদের রোগী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা যাবে না। যদিও অনেক দেশের সরকারই এখন মাদকাসক্তদের রোগী হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। কিন্তু যতক্ষণ না তারা মাদকের চিকিৎসার তহবিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে সরিয়ে স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে না দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।