শিরোনাম
গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানীতে ঢুকে পড়ার পরই চাকরি হারান শিক্ষক হাদিয়া আহমাদি (ছদ্মনাম)। তাঁর বয়স এখন ৪৩। হাড় হিম করা ঠান্ডায় হাদিয়া আহমাদি কাবুলে রাস্তার পাশে বসে এখন জুতা পালিশ করেন। সেখান থেকে অল্প যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
তালেবান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরপরই বিদেশি অর্থসহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আফগানিস্তান চরম মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ভঙ্গুর অর্থনীতি আরও ভেঙে পড়ায় কোটি কোটি মানুষ তীব্র ক্ষুধার মুখে পড়েছে। এতে করে দেশটিতে একসময়ের সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
অর্ধেকের বেশি আফগান অনাহারের হুমকিতে রয়েছে জানিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। দেশটির ৩০ লাখ শিশু এখন অপুষ্টিতে ভুগছে।
পাঁচ সন্তানের জননী হাদিয়া বলেন, ‘আমি যখন দেখলাম, আমার সন্তানেরা খেতে পারছে না, তখন জুতা পালিশ শুরু করি।’
এক দশক শিক্ষকতা করেছেন হাদিয়া। তাঁর স্বামী বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে পাচকের কাজ করতেন। সরকারি একটি সংস্থায় কেরানির চাকরি করতেন তাঁর এক মেয়ে। সব মিলিয়ে সচ্ছল পরিবার ছিল তাঁদের। পারিবারিক বেশ উন্নতিও হচ্ছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে হাদিয়ার পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে।
তালেবান আসার পর মেয়েদের স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলে সবার আগে চাকরি হারান হাদিয়া। এরপর তাঁর স্বামী ও মেয়ে চাকরি হারান। তাঁর এক ছেলে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়তেন। পরিবার থেকে খরচ দিতে না পারায় তাঁর পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে। দৈনন্দিন খাবার জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে ওই পরিবার।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নগদ অর্থের সংকটের মধ্যে দুমুঠো খাবার জোগাতে কাবুলের রাস্তায় মানুষকে বাড়িতে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা যায়। আহমাদির মতো সাধারণ পরিবারের অনেকের কাছে এসব হয়ে ওঠে স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা। দুবেলা খেয়ে বেঁচে থাকার এমন চেষ্টা অনেকেই এখনো করে যাচ্ছেন।
হাদিয়া আহমাদি বলেন, ‘আমরা এখন অনাহারে দিন পার করছি। আপাতত, আমাদের পরিবারে এমন কেউ নেই যে আমাদের সবাইকে আর্থিক সাহায্য করবে।’
১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান যখন শেষবার ক্ষমতায় ছিল, তখন নারীদের ঘরের বাইরের কাজ করতে দিত না। এবার ক্ষমতায় আসার পরও মেয়েদের স্কুল বন্ধ রেখেছে এবং নারীদের জন্য কাজের সুযোগও একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু হাদিয়া আহমাদির মতো অনেকের রোজগার করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
হাদিয়া বলেন, ‘কিছু বিধবা তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। অপর দিকে কিছু নারী তাঁদের স্বামীকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে চান বলে কাজ করেন। তালেবানদের অবশ্যই নারীদের ঘরের বাইরে কাজে যেতে দিতে হবে। অবশ্যই তাঁদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। এখন কোনো কর্মসংস্থান নেই।’