শিরোনাম
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি সম্প্রতি ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। তার আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তি উপলক্ষে দিল্লীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান।
দিল্লীর সেই অনুষ্ঠান শেষে অতীতের স্মৃতির সন্ধানে তিনি ছুটে যান ত্রিপুরায়। সেখানেই তিনি টানা দুইদিন সিপাহীজলা জেলার বক্সনগর সীমান্ত এবং তৎকালীন মহকুমা শাসকের অফিসটি ঘুরে দেখেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এবং তার পরিবারসহ অন্যরা ত্রিপুরায় গিয়ে যেখানে আশ্রয় নেন, সেই জায়গাগুলোও ঘুরে দেখেন। পরে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) তিনি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় ফিরে তৎকালীন মহকুমা শাসকের দায়িত্বে থাকা হিমাংশুমোহন চৌধুরীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
সাক্ষাতকালে সিমিন হোসেন রিমি ১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা স্মৃতিচারণ করেন। রাজ্যে এসে তিনি যার শরণাপন্ন হয়েছিলেন, সেই মহকুমা শাসককে কাছে পেয়ে আরও বেশি করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ সময় তিনি সেখানে স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সেই দিনগুলোর স্মৃতিরোমন্থন করেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তিনি ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন। সিমিন বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুরো বাংলাদেশেই তখন অস্থির পরিস্থিতি। তার বয়স তখন নয় বছর। চার ভাই-বোনের সঙ্গে বাড়িতে তখন একা তার মা সৈয়দা জোহরা। বাবা তাজউদ্দিন আহমদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অতিঘনিষ্ঠ বিপ্লবী এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তাই যুদ্ধের সময় অনাহার অর্ধাহারে শরণার্থী শিবিরে আত্মগোপন করেই দিন কাটছিল তাদের। পরে ত্রিপুরা থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে বহু কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে কোনোক্রমে তাদেরকে নিয়ে ত্রিপুরায় এসে পৌঁছান মা জোহরা।
বক্সনগর সীমান্ত দিয়ে তারা সোনামুড়ায় এসে পৌঁছালে তৎকালীন মহকুমা শাসক হিমাংশুমোহন চৌধুরী তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। নাম মনে না থাকলেও স্মৃতির পাতা থেকে এখনো তিনি মুছে ফেলতে পারেননি যে কীভাবে সে সময় বক্সনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকাল-বিকেল ডাল ভাত, কখনো আবার বেগুন ভাজা দিয়ে তাদের ভাতের ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতেন। একাত্তরের সেই স্মৃতি তিনি এখনো ভুলতে পারেননি বলেই তার এই ত্রিপুরায় ছুটে আসা- জানান সিমিন।
এদিকে, সিমিনের এই রাজ্য পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন আগরতলা থেকে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের হাইকমিশনার মো. জুবায়ের হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী বন্ধু সাংবাদিক স্বপন ভট্টাচার্য ও সমাজসেবী সুনিত সরকার। এদিন তৎকালীন সময়ে সাংবাদিক স্বপন ভট্টাচার্য বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের কাছ থেকে নেওয়া একটি অটোগ্রাফ তুলে দিয়েছেন সিমিন হোসেন রিমির হাতে। মুক্তিযুদ্ধত্তোর কোনো এক সময় তিনি এটি তার কাছ থেকে নিয়ে স্মৃতি হিসেবে এতদিন সযত্নে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন এই সাংবাদিক।