শিরোনাম
উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। রাশিয়া যেকোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মস্কোকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে, আগ্রাসন চালানো হলে ইউক্রেন রক্ষায় সেনা পাঠাবে ওয়াশিংটন। সেই সঙ্গে নতুন করে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথাও ভাবছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এতে পুতিনঘনিষ্ঠ রাজনীতিক ও রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে টার্গেট করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেন নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার এই দুই নেতার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতি রাশিয়ার এই আগ্রাসী আচরণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় নেতারা। বিষয়টি নিয়ে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। ভিডিও কনফারেন্সে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও ইতালির মারিও দ্রাঘিসহ অন্য নেতারা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, ইউক্রেনের সুরক্ষায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ‘ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট’ গঠনে তারা একমত হয়েছেন। মস্কোকে ত্বরিত জবাব দিতে এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার ডাক দিয়েছে লাটভিয়া। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডগার্স রিনকেভিকস বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনই সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
দ্য গার্ডিয়ান আরও জানিয়েছে, পুতিন-বাইডেন বৈঠক সামনে রেখে সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জিলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় বারবার করে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসনের হাত থেকে সুরক্ষার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের পর এক টুইটার বার্তায় জিলেনস্কি বলেন, মস্কোকে ঠেকাতে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে তার সঙ্গে একমত হয়েছেন ব্লিঙ্কেন। এদিন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাও পরিদর্শন করেন জিলেনস্কি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেন ২০১৪ সাল থেকে পূর্বাঞ্চলীয় লুগানস্ক ও দোনেস্ক এলাকায় রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে। এ লড়াইয়ে ১৩ হাজরেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদীকে ক্রেমলিন সহায়তা করছে বলে অভিযোগ করে আসছে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ক্রেমলিন এ অভিযোগ অস্বীকার করছে।
দোনেস্ক এলাকা পরিদর্শনকালে জেলেনস্কি সেনাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ আপনাদের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’ পরে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় নিয়োজিত থাকায় সৈন্যদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মতো সেনাবাহিনী থাকলে আমার বিশ্বাস আমরা নিশ্চিত জয়ী হব।’
২০১৪ সালেও ইউক্রেনের ক্রিমিয়া নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। সেবার রাশিয়ার পরোক্ষ সহযোগিতায় মূল ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপ। তবে এবার সংকটের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। একই সঙ্গে ভয়াবহও। ইউক্রেন নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। দেশটির সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছেন রুশ নেতারা। ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, প্রায় পৌনে দুই লাখ সেনা নিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে পারেন পুতিন। ইতোমধ্যেই প্রায় এক লাখ সেনা সীমান্তে জড়ো হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোর মতে, আগামী জানুয়ারির শেষ নাগাদ আক্রমণ চালানোর পূর্ণ প্রস্তুতিতে পৌঁছে যাবে রাশিয়া। তবে এমন আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছে মস্কো।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন বাইডেন। এই বৈঠকে ইউক্রেন পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দেবেন তিনি। বাইডেন ও পুতিনের এই ভিডিও কল গ্রিনিচ মান সময় ১৫টায় অনুষ্ঠিত হবে। হোয়াইট হাউজের ‘সিচুয়েশন রুম’ থেকে যুক্ত হবেন বাইডেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। তখন রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে ইউক্রেন। ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টাও করে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অঞ্চল হারানোর পর ন্যাটোর সদস্য হতে কোমর বেঁধে নেমেছে দেশটি। সে বছরের ২৩ ডিসেম্বর জোট নিরপেক্ষ অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে ত্যাগ করে ইউক্রেন। এই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা জানিয়েছিল রাশিয়া। ২০১৮ সালে ইউক্রেনকে অ্যাস্পিয়ারিং মেম্বার করে ন্যাটো। ২০২১ সালের শুরুর দিকে ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ ঘোষণা করেন, ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য ইউক্রেন এখন ক্যান্ডিডেট।