শিরোনাম
১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি থেকে বিশ্বে করোনা মহামারি পরিস্থিতি তৈরি হওয়া পর্যন্ত আমেরিকানদের চাকরিতে অবসর নেওয়ার ক্ষেত্রে মন্থর গতিই চলছিল। কিন্তু সেটা এখন আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গেছে। ৫৫ বছর বা এর বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে আগে অবসরে যাওয়ার হার ছিল ৫০ শতাংশ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি উদ্ভূত হওয়ার পর এই হার দুই শতাংশ বেড়েছে।
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আমেরিকার প্রায় অর্ধেক মানুষ (৪৯.৯ শতাংশ) ৬২ বছর বয়সের আগেই অবসর গ্রহণে আগ্রহী। এই সংখ্যা গত দুই বছরের তুলনায় দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর একটি কারণ হলো-বহু স্বচ্ছল আমেরিকান এই ব্যাপারটিকে সহজভাবেই দেখছেন। স্টক মার্কেটের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও বাড়ি ভাড়া বৃ্দ্ধি পাওয়ায় দ্রুত অবসরে যাওয়ার হার বাড়ছে। সরকারি স্বাস্থ্য সেবার মধ্য দিয়ে জীবন পরিচালনায় পরিবর্তন আসায় অনেকের কাছেই এর গুরুত্ব বাড়ছে।
২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অনেক আমেরিকান নাগরিকের জীবনের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল ১.৯ বছর কমেছে। আর এটা তাদেরকে জীবনের সোনালি মুহুর্তের পথ খুঁজতে অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মজীবীরা আতঙ্কিত। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তরুণ সহকর্মীদের চেয়ে বয়স্কদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায় অনেকেই অফিসে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন।
তবে অনেক আমেরিকান নাগরিকই এসময় স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়েননি। যে সকল আমেরিকান বৈশ্বিক মহামারিতে স্থায়ীভাবে শেষবারের মতো চাকরি হারিয়েছেন তাদের সংখ্যা মহামারির শুরুতে ছিল ১২ লাখের মতো। অন্যদিকে বয়োজ্যেষ্ঠ চাকরিজীবীরা এসময় চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ লাভ করেছেন।
নিউ ইয়র্কের নিউ স্কুল ফর সোশ্যাল রিসার্চের গবেষক তেরেসা গিলার্দুচি বলেন, প্রকৃত অর্থে যাদের চাকরি আছে আর যাদের চাকরি নেই, তাদের মধ্যে ব্যবধান প্রকট। সর্বোপরি, অবসরগ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে এর প্রবণতা ভিন্ন।
২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যাদের কলেজের ডিগ্রি একেবারে নেই তাদের তুলনায় ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম লোকজন যাদের কলেজের ডিগ্রি রয়েছে, অবসর গ্রহণে তাদের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে।
এক্ষেত্রে মহামারির সময়ে বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক যাদের কলেজের ডিগ্রি ছিল না তাদের শ্বেতাঙ্গ সহকর্মীদের তুলনায় অধিক হারে কর্মক্ষেত্রে ছাটাইয়ের শিকার হতে হয়েছে। বহু বয়োজ্যেষ্ঠ যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা অন্য চাকরি খোঁজার আশা রাখছেন না।
২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের আর্থিক মন্দার পর ৬২ বছর ও এর অধিক বয়সীরা ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের তুলনায় অধিক চাকরি হারিয়েছেন। আর এদের প্রায় অর্ধেক পুনরায় চাকরির বাজারে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি এই স্বাভাবিক সময়ে এসেও বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মক্ষমরা চাকরি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন এমন ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী আমেরিকান নাগরিকের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পুরো বিষয়টির একটি ইতিবাচক দিক হলো ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে এরকম অনিশ্চয়তার দিকগুলো বিবেচনা করে আমেরিকানরা আগেই পা ফেলেন। ব্যক্তিগত সঞ্চয় জমা না থাকায় বেকার আমেরিকানদের অধিকাংশই সামাজিক নিরাপত্তার ওপর নির্ভর করেন।
সেন্টার অন বাজেট অ্যাণ্ড পলিসি প্রায়োরিটিস নামে একটি থিংক ট্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক নিরাপত্তা প্রায় দেড় কোটি বয়োজ্যেষ্ঠ আমেরিকান নাগরিককে দারিদ্র্যসীমার বাইরে রাখে। আর বৈশ্বিক মহামারি বয়োজ্যেষ্ঠ আমেরিকানদের সাময়িক সময়ের বেকারত্ব তথা কিছু সুযোগ বাড়িয়ে কিছু আর্থিক চাপ কমানোর সুবিধা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু সুবিধাগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছেন।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট