ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি নিয়ে যা বলছেন বিজ্ঞানীরা

ফানাম নিউজ
  ২৮ নভেম্বর ২০২১, ২৩:০৯

বিশ্বের ধনী দেশগুলো গত বছর করোনাভাইরাসের টিকা কেনার পেছনে লেগেছিল। অনেক দেশই নিজেদের জনসংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টিকা মজুদ করেছে। এসব ধনী দেশের অনেকেই স্বল্পোন্নত বিশ্বকে প্রতিশ্রুতি অনুসারে টিকা দিতেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এতেই হয়ত সংকটের শুরু। করোনাভাইরাসের একটি নতুন ও অনেক বেশি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে, যে অঞ্চলে টিকাদানের হার কম।

এই ভ্যারিয়েন্টটি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে। যদিও এটি অস্পষ্ট যে এটির উদ্ভব সেখানেই হয়েছে নাকি অন্য কোনও দেশ থেকে অঞ্চলটিতে ছড়িয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন ওমিক্রন দ্রুত মিউটেট করতে পারে। বিশেষ করে যেখানে টিকাদানের হার কম এবং সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের গ্লোবাল হেলথের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মাইকেল হেড বলেন, হয়ত এই ভ্যারিয়েন্ট অন্য কোনও দেশে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছে। দেশটির খুব ভালো জিনোমিক সিকুয়েন্সিং সক্ষমতা ও সামর্থ্য রয়েছে। এটি মহামারির একটি পরিণতি হতে পারে। সম্ভব সাব-সাহারা আফ্রিকার কোনও দেশে প্রথম উদ্ভব হয়েছে ভ্যারিয়েন্টটি। অঞ্চলটিতে জিনোমিক সার্ভেইল্যান্স খুব বেশি নেই ও টিকাদানের হার একেবারে কম।


তার মতে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব বিশ্বে টিকাদানের গতিতে মন্থর গতির কারণে একটি স্বাভাবিক পরিণতি। টিকা না নেওয়া মানুষের সংখ্যা এখনও বিশাল। যেমনটি সাব-সাহারা অঞ্চলে রয়েছে এবং যা বড় প্রাদুর্ভাবের জন্য সহায়ক।

হেড জানান, অতীতে ভাইরাসটির যেসব নতুন ভ্যারিয়েন্ট সমস্যা তৈরি করেছে যেখানে প্রাদুর্ভাব ছিল বড় ও ভয়াবহ। যেমন, গত বছর ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে প্রথম আলফা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় এবং ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ভারতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।

বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে টিকাদানের হারে বড় ধরনের পার্থক্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট উদ্ভবের জন্য দায়ী।

স্বাস্থ্য গবেষণা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ওয়েলকাম ট্রাস্ট-এর পরিচালক জেরেমি ফারার জানান, নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখিয়ে দিয়েছে কেন বিশ্বের উচিত টিকা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামের সমান প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।

ফারার বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট একটি সতর্কবার্তা। মহামারির অবসান এখনও অনেক দূর। বৈষম্য মহামারিকে আরও প্রলম্বিত করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অর্থায়ন বিষয়ক দূত ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন শনিবার দ্য গার্ডিয়ানে লিখেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের মানুষকে টিকাদানে বিশ্বের ব্যর্থতা এখন আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও আমরা এমন পরিস্থিতিতে।

তিনি আরও লিখেছেন, গণ টিকাদানের অনুপস্থিতির কারণে করোনা শুধু যে প্রতিষেধক না দেওয়া মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে তা নয়, এটি ধরনও পাল্টাচ্ছে। দরিদ্র দেশগুলোতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হচ্ছে এবং এখন তা বিশ্বের ধনী দেশগুলোর পূর্ণাঙ্গ টিকা নেওয়া মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার হুমকি হাজির করছে।

মাইকেল হেড এই পর্যালোচনার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এটি আমাদের কামড় দিতে ফিরে আসছে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসা এবং বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষকে টিকাদানের আগ পর্যন্ত হয়ত এটি ফিরে আসবে। ভারতে ডেল্টার ক্ষেত্রে আমরা এমনটি দেখেছি। 

সূত্র: সিএনএন