শিরোনাম
অস্ট্রেলিয়ার কাছে সাবমেরিন বিক্রির কথা ছিল ফ্রান্সের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কারণে সেই চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। অস্ট্রেলীয়দের এখন পরমাণু শক্তিচালিত অত্যাধুনিক সাবমেরিন বানাতে সাহায্য করছে দেশ দুটি। এতে বেজায় ক্ষেপেছে ফ্রান্স। ফরাসিরা মনে করছেন, তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে ফ্রান্স সরকার। স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের খবর, এ অবস্থায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে কথা বলতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফরাসি সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, শিগগিরই এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টই কথা বলতে চেয়েছেন।
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে নতুন এক জোট গড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) তিন দেশের সরকারপ্রধান যৌথভাবে এ জোটের ঘোষণা দেন। চুক্তি অনুসারে, অস্ট্রেলিয়াকে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈরিতে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ফ্রান্স। স্বার্থে আঘাত লাগায় সরাসরি বাইডেনের সমালোচনা করতেও ছাড়েনি তারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, ২০১৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ডিজেলচালিত সাবমেরিন কিনতে কয়েকশ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সেটি বাদ দিয়ে এবার পারমাণবিক শক্তিচালিত অত্যাধুনিক সাবমেরিন তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি করেছে অজি সরকার।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্সের সঙ্গে আগের চুক্তিটি স্থগিত করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন খোদ অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তার কথায়, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তায় দ্রুত পরিবর্তন’ আসার কারণে প্রচলিত সাবমেরিনগুলো চাহিদার ‘অনুপযুক্ত’ হয়ে পড়েছে।
আর এতেই ক্ষেপেছে ফ্রান্স। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লে দ্রিয়াঁ এটিকে সরাসরি ‘পিঠে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়েছিলাম, সেটি ভাঙা হয়েছে।
তবে ফ্রান্সের মূল ক্ষোভটা গিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। এভাবে ‘একতরফা’ চুক্তি করায় বাইডেনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিল খুঁজে পেয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ফ্রান্সইনফো রেডিওকে বলেছেন, (বাইডেনের) এই নৃশংস, একতরফা ও অনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত অনেকটা ট্রাম্প যা করতেন, আমাকে সেটিই মনে করিয়ে দিচ্ছে। মিত্রদের সঙ্গে এমনটি করতে হয় না।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায় ফ্রান্স। কথা ছিল, চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক হবে। কিন্তু ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুরোধে সেই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য ফ্রান্সকে বলেছেন, তিনি সম্পর্ক মেরামত করতে চান। বলেছেন, ফরাসির প্রতি আমাদের ভালোবাসা অটুট রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠালেও যুক্তরাজ্য থেকে ডাকেনি ফ্রান্স। এ বিষয়ে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্স ২ টিভিকে বলেছেন, যুক্তরাজ্য থেকে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ব্যাখ্যা চাওয়ার দরকার নেই। কারণ, যুক্তরাজ্য বরাবরই সুবিধাবাদী নীতিতে চলে। আর এখানে তারা তৃতীয় পক্ষ মাত্র।