শিরোনাম
লীল্যান্ড ক্লেনকিয়ান একটি পাম গাছের মধ্যে নিজের কুড়াল দিয়ে খোঁচাচ্ছেন। গাছটি প্রায় ক্ষয়প্রাপ্ত। এরপর তিনি কাঠের মধ্যে থেকে একটি পোকা বের করে আনলেন (ইংরেজিতে যাকে বলে ট্যাকোমা ওয়ার্ম)। পোকাটিকে তিনি একটি প্লাস্টিকের বাটিতে রাখলেন। এটি স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় আরাওয়াকের একটি সুস্বাদু খাবার হিসেবে পরিচিত। সেখানে প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা এ ধরনের খাবার খায়। এ সম্প্রদায় গায়ানার রাজধানী জর্জটাউন শহর থেকে দুই ঘণ্টার রাস্তা এমন দূরত্বে বসবাস করে।
খাবারটি তাদের কাছে মাখনের মতো যাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন। কোনো ধরনের তেল ছাড়াই পোকাটি রান্না করা যায়। ৭৩ বছর বয়সী ক্লেনকিয়ান এমনটাই জানালেন। একসময় তিনি আরাওয়াক সম্প্রদায়ের প্রধান ও সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন।
ক্লেনকিয়ান বলেন, এ পোকাগুলো কাঁচা, ভাজা, স্ক্যুয়ার ও মার্শম্যালোর মতো ভুনা করে খাওয়া যায়। এই ধরনের পোকামাকড় বিশ্বব্যাপী খাদ্য ব্যবস্থাকে আরও টেকসই করতে সাহায্য করতে পারে। শহরের একদল দর্শনার্থী পেঁয়াজ দিয়ে ভাজা ট্যাকোমা প্রজাতির পোকা খেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে মোট জনসংখ্যা হবে ৯০০ কোটি। গবাদিপশু থেকে যে পরিমাণ গ্যাস নির্গমন হয় তা জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। তাই টেকসই ভবিষৎতের জন্য খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন খুবই জরুরি। পোকামাকড় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী পশুসম্পদশিল্প মানব সৃষ্ট কার্বন নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী।
গবাদিপশু গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে। তাই পৃথিবী ভালো রাখার জন্য খাদ্য হিসেবে মাংসের চেয়ে পোকামাকড় ৮ গুণ বেশি উপকারী বলে জানান নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মমন্ডলীয় কীটতত্ত্বের ইমেরিটাস অধ্যাপক আর্নল্ড ভ্যান হুইস। তিনি তার পেশাগত জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন খাদ্য ব্যবস্থায় পোকামাকড়ের ভূমিকা নিয়ে।
তিনি বলেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার বিষয়টি সবার উপলব্ধি করা উচিত। আমি মনে করি মুরগির চেয়ে পোকামাকড় খাওয়া অনেক বেশি নিরাপদ। পোকামাকড় শ্রেণীবিন্যাসগতভাবে মুরগি বা শূকরের চেয়ে মানুষের থেকে অনেক দূরে। গবাধিপশু রোগ ব্যাধি বহন করে। যা মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তবে খাদ্য হিসেবে পোকামাকড় মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষি জমি এরই মধ্যে গবাদি পশুর জন্য ব্যবহৃত হয় বলেও জানান তিনি।
এফএও এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের দক্ষিণাংশের মানুষের কাছে পোকামাকড় খাওয়া নতুন কিছু নয়। বিশ্বের দুইশ কোটি মানুষ তাদের খাবারের অংশ হিসেবে পোকামাকড় খেয়ে থাকেন। পৃথিবীতে খাওয়া যায় এমন এক হাজার ৯০০ প্রজাতির পোকামাকড় আছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা প্রজাতির পোকামাকড় নিয়মিত খাওয়া হয় এবং এগুলো এসব দেশে খুবই জনপ্রিয় খাবার। যেমন চীনের কিছু অংশে রাস্তার খাবার হিসেবে মশলাদার বিচ্ছু, পশ্চিম কেনিয়ার ভাজা উইপোকা, ইন্দোনেশিয়ায় তরকারি ড্রাগনফ্লাই, ক্যামেরুনের কিছু অংশে বিটল লার্ভা, কম্বোডিয়ায় ওক-ভাজা ট্যারান্টুলাস বা রেশম কীট, গ্রামীণ জিম্বাবুয়েতে সস-ভেজা মোপান কৃমি। তাছাড়া মোক্সিকো, নাইজার ও গায়ানাতেও খাওয়া হয় পোকামাকড়।
সূত্র: আল-জাজিরা