শিরোনাম
লোহিত সাগরে কিছু দিন আগেই মার্কিন যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে যৌথ মহড়া দিয়েছে ইসরাইল, আমিরাত ও বাহরাইনের নৌবাহিনী।
এই মহড়ার ঠিক আগেই ইসরাইলের বন্দর নগরী ইলাতের ঠিক উত্তরে একটি মরুভূমির বিমানঘাঁটিতে আরেকটি বিমান মহড়া হয়, যেখানে ইসরাইল ছাড়াও আরো সাতটি দেশের যুদ্ধবিমান প্রচণ্ড গর্জনে আকাশ কাঁপিয়েছে। এই মহড়াগুলোর অন্যতম লক্ষ্য ইরানকে একটি কড়া সতর্কবার্তা পাঠানো এবং কৌশলগত জোটের ওপর গুরুত্বারোপ করা। সম্প্রতি ইরানও বড়সড় সামরিক মহড়া চালিয়েছে।
এসব ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে, যখন ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ইসরাইলকে একাকী ব্যবস্থা নিতে হয় কি না তা নিয়ে ক্ষুদ্র দেশটির মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক সাইটগুলোতে সম্ভাব্য হামলার জন্য ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত করতে দেশটির সরকার ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে এবং রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা প্রায় প্রতিদিনই হুশিয়ারি দিচ্ছেন।
ইরান বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় পর্যবেক্ষক একজন ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কোন আগ্রহ ইসরাইলের নেই। তবে আমরা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেব না।"
তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতির আলোকে, আমরা সামরিক সক্ষমতাসহ সব বিকল্প এবং পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য উপযুক্ত উপাদান তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে যা অতীতে ছিল না। এই বিষয়টি ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা সংস্থা অনুমান করছে যে, ইরান যদি চায় তাহলে এটি এখন এক মাসের মধ্যে একটি পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জমা করতে পারে। এমন সময় ইসরাইলের এই সামরিক আস্ফালন শোনা গেল যখন ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে ইরান এবং পাঁচটি বিশ্বশক্তির মধ্যে আলোচনা চলছে। ওই চুক্তিটি 'জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন' (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। এ সম্পর্কিত পরবর্তী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবার কথা আগামী ২৯শে নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়।
নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার তারিখ নির্ধারণের পরপরই ইরান জানিয়েছে যে, তারা ২৫ কেজি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে যা প্রায় ৬০% বিশুদ্ধ। একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য যতটুকু সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন এটা তার প্রায় কাছাকাছি। এছাড়া আরো ২০% বিশুদ্ধ আরো ২১০ কেজির বেশি ইউরোনেয়িামও সমৃদ্ধ করেছে ইরান।
যদিও তেহরান জোর দিয়ে বলছে এগুলো শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, তারপরও এমনকি ইরানি বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেছেন যে, এর আগে এই ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম শুধুমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছেই ছিল।
ইসরাইলেরও পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, তবে এ বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবেই অস্পষ্টতা রাখার একটি সরকারি নীতি বজায় রাখা হয়েছে। তাদের দৃষ্টিতে পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইরানকে ইসরাইলের অস্তিত্বের প্রতি একটি হুমকি। ইরান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না এবং এর কর্মকর্তারা প্রায়শই এই বিশ্বাসকে সমর্থন করে যে, এটি শেষ পর্যন্ত বিলীন হয়ে যাবে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব উপসাগরীয় দেশগুলো, যাদের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে, তারাও ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকার গভীর বিরোধিতা করছে। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে ঠিক কোন পর্যন্ত তাদের নিজেদের স্বার্থ ইসরাইলকে একটি সামরিক পদক্ষেপ নেয়ায় সহায়তা করা থেকে ঠেকিয়ে রাখবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা