শিরোনাম
২০১৮ সালে বিয়ের পর প্রথম কয়েক মাস সব কিছু ভালোভাবেই চলছিল ভারতের কেরালা রাজ্যের সুরুজ কুমার-উথরা দম্পতির।
তাদের একটি ছেলেও হয়। কিন্তু তার পরই শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা স্বমূর্তি ধারণ করতে শুরু করেন। উথরার পরিবারের কাছে তারা আরও অনেক যৌতুক দাবি করতে শুরু করেন। সেসব দাবিও মেনে নেন উথরার বাবা। উল্টো মেয়ের দেখাশোনার জন্য প্রতি মাসে জামাইকে আট হাজার টাকা করে দিতে থাকেন। কিন্তু তাতেও মন ভরেনি সূর্যের। সূত্রঃ সিএনএন
উথরার শুনতে ও বলতে পারার সমস্যার কারণে আর তার সঙ্গে সংসার করতে চাইছিলেন না স্বামী। অথচ বিচ্ছেদের কোনো অজুহাতও দেখানোর ছিল না তার কাছে। সে কারণেই খুনের ছক কষে ফেলেন। ২০১৯ সাল থেকেই বিষধর সাপের সম্বন্ধে জানার কৌতূহল জন্মায় সূর্যের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি ইন্টারনেটে সাপের ভিডিও দেখতেন। ইউটিউবে বিভিন্ন সাপ বিশেষজ্ঞদের চ্যানেল দেখতেন। ওই বছরই ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সাপুড়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপ কিনেছিলেন তিনি।
সিঁড়িতে সেই সাপ রেখে উথরাকে দোতলা থেকে মোবাইল ফোন আনার অনুরোধ করেছিলেন। ভেবেছিলেন সিঁড়িতে পা দিলেই চন্দ্রবোড়া কামড় দেবে স্ত্রীকে। কিন্তু তার আগেই সিঁড়িতে সাপটিকে দেখতে পেয়েছিলেন উথরা।
সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। বুঝতেও পারেননি স্বামী তাকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এর কয়েক মাস পর ফের ওই একই সাপ বিছানায় ছেড়ে ঘুমের মধ্যে উথরাকে মারার চেষ্টা করেছিলেন। সাপের কামড় খেয়েও সেবার প্রাণে বেঁচে যান তিনি। সাপ কামড়ানোর পর সেবার অন্তত ৫২ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বাড়ি ফিরেছিলেন।
প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। এ রকম অবস্থাতেই তার বিছানায় এবার একটি কেউটে সাপ ছেড়ে দেন স্বামী সূর্য। ঘুমের মধ্যে সাপের কামড় খেয়ে যাতে স্ত্রীর ঘুম ভেঙে না যায়, তাই শোবার আগে ফলের রসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছিলেন উথরাকে। তৃতীয়বার আর ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি তার। এবার কেউটে সাপের কামড়ে মৃত্যু হলো উথরার।
২০২০ সালের ৭ মে রাতে নিথর শরীরে ওপরে ঘোরাফেরা করে বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার উপক্রম করতেই সাপটির মাথা চেপে ধরে উথরার বাঁ হাতে তার বিষদাঁত নিজে বসিয়ে দেন সূর্য। এভাবে দুবার সাপের বিষদাঁত বসিয়ে দেন তিনি।
উথরার ময়নাতদন্তের পর একই জায়গায় দুবার সাপের ছোবল দেখেই সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। কারণ সাপ সাধারণত অকারণে দুবার কামড়ে বিষ নষ্ট করতে চাইবে না। পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় তদন্তকারীদের ভাবিয়ে তুলেছিল। গভীর রাতে উথরাকে সাপ কামড়ে ছিল। সর্প বিশারদদের মতে, সাধারণত রাত ৮টার পর কেউটে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর দোতলার যে ঘরে উথরা ছিলেন, সেখানে বাইরে থেকে সাপ ঢোকার কোনো রাস্তাও ছিল না।
তার ওপর যে সাপটি কামড়ে ছিল, তাকে পরে ঘরের মধ্যে দেখতে পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলেন উথরার ভাই। সেই সাপ পরীক্ষার পর জানা যায়, গত সাত দিন ধরে সাপটি সম্পূর্ণ না খেয়ে রয়েছে। বন্য সাপ দিনে দুবার খায়। তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, সাপটি এই সাত দিন ধরে কোথাও বন্দি ছিল। এ ছাড়া সাপের কামড় খাওয়ার পর যন্ত্রণায় উথরার ঘুম ভেঙে যাওয়াও উচিত ছিল। যার কাছ থেকে সূর্য সাপটি কিনেছিলেন, তদন্তে তার সন্ধানও পাওয়া যায়। তাকে গ্রেফতারের পরই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয় তদন্তকারীদের সামনে।
খুন করে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিতে দিনের পর দিন ছক কষেছিলেন সূর্য। সাপ ধরাও শিখে নেন তিনি। এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।